নারীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল গ্রেপ্তার

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
বিবাহিত এক নারীর সঙ্গে ফেসবুকে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয়দানকারী এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গত রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের নাম মো. রবিউল ইসলাম রবি। সে রাজশাহী মহানগরীর দামকুড়া থানার কলার টিকর গ্রামের মো. আসাদ আলীর ছেলে। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- পাবনা সুজানগরের মোসা. ফরিদা আক্তার (ছদ্মনাম) নামের এক বিবাহিত নারীর সাথে ফেসবুকে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পরিচয় দেয়া প্রতারক রবিউলের পরিচয় হয়। গত ১ বছর ধরে তাদের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। রবিউল নানাভাবে বিভিন্ন মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দেখিয়ে ফরিদার বিশ্বস্ততা অর্জন করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে এবং সাক্ষাৎ হয়। রবিউল মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দেখিয়ে ফরিদার প্রথম স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে। এরপর রবিউল গত ১৩ আগস্ট ২০২১ ফরিদাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই গোপনে রবিউল তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি মোবাইলে ধারণ করে। ফরিদা একসময় বিষয়টি জানতে পারে এবং তার অনুমতি না নিয়ে রবিউল গোপনে প্রায়ই তার ফেসবুক মেসেঞ্জার হতে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে চ্যাট করে। এক সময় কৌশলে রবিউল ফরিদাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে।
ফরিদা জানায়- রবিউল প্রায়ই মোবাইলে লে. কর্নেল পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিসার ও ব্যক্তির সাথে কথা বলতো এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রদানের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করতো। এক পর্যায়ে ফরিদা রবিউলের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারলে, রবিউল ফরিদার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে এবং তকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ফরিদা তার মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিউলকে তালাক দেয়। এতে রবিউল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ফরিদার নামে গোপনে একটি ফেসবুক একাউন্ট খোলে। এরপর সেই ফেসবুক একাউন্টের মেসেঞ্জার হতে তার আত্মীয় স্বজনদের নিকটে তার নামে বিভিন্ন মানহানিকর ম্যাসেজ এবং গোপনে ধারণকৃত তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আপত্তিকর ছবি পাঠায়।
রবিউল কেন গোপনে এই কাজগুলো করছে ফরিদা জানতে চাইলে রবিউল তার নিকট টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তার প্রথম পক্ষের স্বামী, সন্তানসহ নিকট আত্মীয়দের ক্ষতিসাধনসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি রবিউলের মোবাইলে গোপনে ধারনকৃত ফরিদার আপত্তিকর ও অশ্লীল ছবি ফেসবুক আইডি থেকে ভাইরাল করে দিবে বলে ভয় দেখায়। ফরিদা নিরুপায় হয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের দামকুড়া থানায় এসে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। পরবর্তীতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযোগটি বিশ্লেষণ করে সত্যতা পায় এবং আসামীর ব্যবহৃত ডিভাইসসহ পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়- রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশনায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে সাইবার ক্রাইম টিম কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের সহায়তায় কোর্ট স্টেশন এলাকা হতে ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল পারিচয়দানকারী এই প্রতারককে রবিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক রবিউল তার অপরাধের কথা স্বীকার করে। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ ভুয়া সেনাকর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রতরণামূলক কাজ করে আসছিল। পরে প্রতারক রবিউলকে দামকুড়া থানায় পাঠানো হয়। সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সেই মামলায় সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।