South east bank ad

দাদির কোলে গিয়েই কান্না থামল সেই জমজ শিশুর

 প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

দাদির কোলে গিয়েই কান্না থামল সেই জমজ শিশুর
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :

ঝালকাঠি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে পুলিশের স্ত্রীর রেখে যাওয়া জমজ শিশুর আশ্রয় এখন দাদির কাছে। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠি সদর থানা থেকে দাদি এসে তার নিজ জিম্মায় নেয়ার পরে কান্না থামে শিশু দুটির। কাঠালিয়া থানায় কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত পুলিশ সদস্য ইমরান স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পরে বাচ্চাদের খরচ ও ভরণ পোষন বাবদ মাসিক ৩হাজার টাকা ধার্য থাকলেও তা নিয়মিত না দেয়া এবং চিকিতসা খরচ চালাতে অপারগতা প্রকাশ করলে নিরুপায় হয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রবিবার বিকেল ৩টার দিকে এসপি অফিসের সামনে রেখে যান। পরে তাদেরকে ঝালকাঠি সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে নিয়ে রাখা হলে দায়িত্বরত পুলিশের নারী কনস্টেবল তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। শিশুদের কান্নায় থানার পরিবেশ হৃদয় বিদারক হয়ে ওঠে। সদর থানা থেকে ইমরানকে বিষয়টি জানানো হলে তার মা রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিশু দুটিকে নিয়ে যান। দাদির কাছে যাওয়ার পরপরই কান্না থামে তাদের।

ঝালকাঠি সদর থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেন, জমজ দুই শিশুকে রাতেই ওদের দাদির জিম্মায় দেয়া হয়েছে।

ঝালকাঠিতে আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের জমজ দুই ছেলে সন্তানকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে প্রতিবাদ জানান এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। শিশু দুটিকে ঝালকাঠি থানার নারী ও শিশু ডেস্কে নিয়ে রাখা হয় ।  দুই শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে থানা পুলিশ। স্বামী ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন না করায় রবিবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে যান শিশু দুটির মা সুমাই আক্তার।   
থানা পুলিশ ও  শিশুদের মা সূত্রে জানা যায়, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। সে বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তাঁর বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে। ২০১৯ সালের মে মাসে শিশু দুটির মা ঝালকাঠি সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সাথে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে এ বছরের মার্চ মাসে স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান ইমরান। তালাক নোটিশ পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করে সুমাইয়া । শিশু দুটির মা সুমাইয়ার দাবি তালাক নোটিশ পাঠানোর আরও আগ  থেকে তাঁর এবং সন্তানদের কোন ভরণপোষণ দিচ্ছেনা ইমরান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানী মাহফূজ মিয়া বলেন,  বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে একজন নারী তাঁর দুই শিশু সন্তানকে এসপি অফিসের চেক পোষ্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান। যাবার সময় সে বলে যায়,  তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক। সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায় , শিশু দুটির কান্নায় থানার পারিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের এক নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরে জ্বর থাকায় তাপমত্রা ছিল অনেক বেশি।

সুমাইয়া আক্তার মুঠোফোনে জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শিশু আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় প্রায় ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি কনস্টেবল ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন।

তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতে জন্য যাই। কিন্তু প্রধান গেটের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও  মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি। ওদের লালন পালন করতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু খরচ চালানোর মত সংগতি আমার নেই ।

কনস্টেবল ইমরান মোবাইলে জানান, প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য তিন হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাঁদের খোঁজ খবর  নেই। কিন্তু মা হয়ে সে কিভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল ?

ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি দুই পরিবারের সাথে কথা বলে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। শিশুদের দাদা দাদীকে খবর দিলে রাতে তাঁরা আসলে শিশু দুটিকে দাদির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
BBS cable ad