South east bank ad

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক : ডিএসসিসিকে ৭ বছর রাজস্ব দেয়নি ওরিয়ন

 প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৫৭ অপরাহ্ন   |   সিটি কর্পোরেশন

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক : ডিএসসিসিকে ৭ বছর রাজস্ব দেয়নি ওরিয়ন
ঢাকা মহানগরের যানজট নিরসনে ৯ বছর আগে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কে যানচলাচল শুরু হয়। কিন্তু উদ্বোধনের ৭ বছর পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে রাজস্ব (টোল থেকে আয় করা টাকা) দেয়নি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এতে করে সংস্থাটি প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগের অভাবে এ খাত থেকে টাকা পায়নি সংস্থাটি। বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করেছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। বর্তমানে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ে তৎপর ডিএসসিসি। গত অর্থবছর ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করেছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরও প্রতি মাসে লভ্যাংশ দিচ্ছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

ডিএসসিসির হিসাব বিভাগ জানিয়েছে, শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই উড়ালসড়ক থেকে রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ নেন। এখন প্রতি মাসেই লভ্যাংশ দিচ্ছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার। তবে লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও বিগত বছরের বকেয়া আদায়ের উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

গত ২০১৩ সালে ১১.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের (শনির আখড়া থেকে চাঁনখারপুল) মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক উদ্বোধন করে সরকার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ প্রকল্পে দুই হাজার ১০৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এটি চালু হওয়ার পর রাজধানীর সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৩০টি জেলার যাতায়াতে সুবিধা হয়েছে। ৪ লেনবিশিষ্ট উড়ালসড়কটিতে ওঠা-নামার মোট ১৩টি পথ রয়েছে।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ২০১০ সালে এ উড়ালসকড়টি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। এজন্য জায়গার মালিক ডিএসসিসির সঙ্গে ওরিয়নের একটি চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, দিনে ৬৫ হাজার ৫৮১টির বেশি যানবাহন এই উড়ালসড়ক দিয়ে যাতায়াত করলে টোল থেকে আয়ের ৫ শতাংশ টাকা ডিএসসিসিকে দেওয়ার কথা। কিন্তু ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত কোনো লভ্যাংশ ও কোনো হিসাব দেয়নি ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার। পরবর্তীতে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ওরিয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসসিসি মেয়র যোগাযোগ করার পর ওরিয়ন জানিয়েছে, তাদের উড়ালসড়ক দিয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ি চলে না। তাই চুক্তি মোতাবেক সেই পরিমাণ গাড়ির বেশি না চললে তারা লভ্যাংশ দেবে না। তখন নিজ ব্যবস্থাপনায় উড়ালসড়কের প্রতিটি সংযোগে টোলপ্লাজা স্থাপনের কথা জানান মেয়র। পরে প্রতি মাসে টোলের লভ্যাংশ দিতে রাজি হয় ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
ডিএসসিসির ওই কর্মকর্তা জানান, গত অর্থবছর ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করে ডিএসসিসি। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা দেয় ওরিয়ন। তবে কী পরিমাণ যানবাহন উড়ালসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে, ওরিয়ন টাকা কম বা বেশি দেয় কি না তার কোনো তথ্য ডিএসসিসির কাছে নেই। ফলে এখন ওরিয়ন যা দিচ্ছে তাই নিচ্ছে ডিএসসিসি। যাচাই-বাছাই করছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১১.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উড়ালসড়কে ওঠার ৬টি ও নামার ৭টি পথ রয়েছে। নামার পথগুলোর মধ্যে গুলিস্তানে দুটি, সায়েদাবাদে দুটি, ধোলাইপাড়ে একটি, ডেমরা রোডের কাজলায় একটি ও শনির আখড়ায় একটি টোলপ্লাজা রয়েছে। এর মধ্যে শনির আখড়া থেকে গুলিস্তানে বেশি যানবাহন চলাচল করে।

দিনে কত সংখ্যক যান চলাচল করে তা জানতে গুলিস্তান টোলপ্লাজায় গেলে সংশ্লিষ্ট কেউ এ তথ্য দিতে রাজি হননি। তারা ওরিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে ওরিয়নের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ওরিয়নের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের হটলাইন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও কেউ রিসিভ করেননি।
মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের টোল আদায়ের কাজটি তদারকি করে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখা। এ শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, উড়ালসড়কটি উদ্বোধনের পর দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব দেয়নি ওরিয়ন। ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের হস্তক্ষেপে এখন তারা নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছে। প্রতি মাসের নির্ধারিত সময় রাজস্ব জমা না দিলে তাদের ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে। তবে এখন দিনে কোন ধরনের, কত সংখ্যক গাড়ি যাতায়াত করে তার কোনো তথ্য দিতে পারেননি আবুল খায়ের।

ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উদ্যোগের ফলেই এখন উড়ালসড়ক থেকে রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের। বিগত বছরে ওরিয়ন যে টাকা দেয়নি, সেই বকেয়া আদায় করা হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

BBS cable ad

সিটি কর্পোরেশন এর আরও খবর: