চাকুরী দেওয়ার নামে অর্থ গ্রহণ : প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র। জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এসব প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা তৎপর।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা মহানগরস্থ মিরপুর মডেল থানাধীন মনিপুর এলকায় আজ অভিযান পরিচালনা (ক) মোঃ মইনুর রশিদ চৌধুরী (৩৫), জেলা- হবিগঞ্জ , (খ) মোঃ জিয়াউর রহমান @ মুন (৩২), জেলা- মাগুরা, (গ) মোছাঃ আফসানা জান্নাত লিজা (২২), জেলা- মাগুরা'কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা তাদের প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তারা পরস্পর যোগসাজশে শিক্ষিত বেকার তরুণ তরুণীদের চাকুরী দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে প্রতারণা করে আসছিলো। প্রতারণার কৌশল হিসেবে তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজধানীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে, বিভিন্ন দপ্তরের তদবিরের মাধ্যমে বিদেশি প্রজেক্ট দেখিয়ে সাধারণ মানুষের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করে নেয়। গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যরা এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে এবং এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রতারক চক্রের প্রধান মোঃ মইনুর রশিদ চৌধুরী (৩৫) সম্পর্কে কিছু তথ্য:
মোঃ মইনুর রশিদ চৌধুরী (৩৫) হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন রুদ্রগ্রাম এলাকায় জম্মগ্রহণ করে একটি স্থানীয় কলেজে এইচএসসি অধ্যয়নরত অবস্থায় পড়ালেখা বাদ দিয়ে ১৯৯৮ সালে মধ্য প্রাচ্যের দেশে চলে যায়। চার বছর সেখানে অবস্থান করার পর ২০০২ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকায় একটি সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানীতে সুপার ভাইজার পদে যোগ দেন। চার মাস থাকার পর ‘কনফিডেন্স সিকিউরিটি সার্ভিস’ নামে সে নিজেই একটি লাইসেন্স বের করে ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে সে ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড কালচারাল ফাউন্ডেশন’ নামের একটি মানব আধিকার সংগঠনের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। উক্ত সংগঠনে থাকার সুবাদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় নামে বেনামে বিভিন্ন ভুইফোর সংগঠন পরিচালনা করে। সে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাত করে এবং চাকরির প্রলোভন, সরকারি দপ্তরে তদবির, বিদেশি প্রজেক্ট দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাত করে। এছাড়াও ‘এশিয়ান হিউম্যান রাইটস এন্ড কালচারাল ফাউন্ডেশন’ নামে মাগুরা সদরের ভায়নার মোড় এলাকায় তাদের অফিস ছিল যা ধৃত অপর দুই আসামী পরিচালনা করতো। ধৃত আসামী মোছাঃ আফসানা জান্নাত @ লিজা (২২) ভুক্তভোগীদেরকে বিভিন্ন চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়ে তা মোঃ মইনুর রশিদ চৌধুরী (৩৫) এর নিকট পাঠাতো। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জানা যায় তার বাসা এবং অফিসের ঠিকানায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে। কাউকে চাকরির কথা বলে টাকা নেয়া, কাউকে বিদেশ পাঠানো, কারো কাছ থেকে বিনিয়োগ নিয়ে লাপাত্তা, কাউকে ঠকানোই ছিল তার প্রতিদিনের কাজ। তার বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণা সংক্রান্ত অসংখ্য জিডি ও অভিযোগ রয়েছে।