South east bank ad

আশুলিয়া এলাকা হতে তিন অনলাইন জুয়ারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪

 প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২১, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন   |   র‍্যাব

আশুলিয়া এলাকা হতে তিন অনলাইন জুয়ারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪
এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। এছাড়াও জঙ্গীবাদ, মাদক, সন্ত্রাস, অস্ত্র, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা, স্পর্শকাতর ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ক্যাসিনো এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা ভিত্তিক অনলাইন জুয়া বিরোধী অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে র‌্যাব সদা সচেষ্ট। এর ফলে সমাজের সহজ সরল নিরীহ লোক লোভে ও নেশাগ্রস্ত হয়ে জুয়ায় সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং তৈরী হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। এ ধরনের অনলাইনভিত্তিক জুয়াড়ি চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট।

বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ আসে যে, দেশি-বিদেশী ফুটবল, ক্রিকেট খেলা যেমন, আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল, এসপিএল, সিপিএল, বিভিন্ন আন্তজার্তিক ক্রিকেট সিরিজ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, লা-লিগা, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিসহ বিবিধ খেলায় এক শ্রেণির অনলাইন জুয়াড়ী জুয়া খেলে দেশে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। সম্প্রতি ইউরো কাপ ফাইনাল এবং কোপা আমেরিকা ফুটবল কাপ ফাইনাল খেলা’কে কেন্দ্র করে অনলাইন জুয়াড়ীরা বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ ও খেলাপ্রেমীদের উপর ভিত্তি করে আরো সক্রিয় হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই ২০২১ ইং তারিখ রাত ১১.৩০ ঘটিকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অনলাইনে জুয়া খেলার অপরাধে মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন নথিপত্রসহ আশুলিয়া এলাকার অনলাইন জুয়ারী চক্রের নিম্নোক্ত ০৩ সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। 

(ক) মোঃ কামাল হোসেন (৩৩), জেলা- কুমিল্লা।
(খ) মোঃ টুটুল মোল্লা (৩২), জেলা- নড়াইল।
(গ) মোঃ মিজানুর রহমান (৩৩), জেলা- চাঁদপুর।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা উক্ত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে। আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা অনলাইন জুয়ার সাইটে ইউজার আইডি খুলে বেটিং সাইটের এজেন্টের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ডলার ও ক্রিকারেন্সি ক্রয় করে এবং ওই বেটিং সাইটে ডিপোজিট করে দীর্ঘদিন যাবৎ জুয়া খেলে আসছে। তারা অনলাইন জুয়া খেলার ওয়েবসাইট betbuzz.com, 9wickets.live এবং bajilive এর bankok app এ প্রদর্শিত খেলাধুলার বাজি পরিচালনা করে এবং পলাতক আসামীদের সহযোগীতায় বাজির টাকা ডলারে কিংবা ডলার টাকায় রুপান্তরিত করে ড়হষরহব জুয়া খেলা পরিচালনা করে আসছিলো। গ্রেফতারকৃত আসামীরা নিজ বিকাশ নম্বরে টাকার লেনদেন করে থাকতো। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায় যে উক্ত ওয়েব সাইটে তাদের নিজস্ব এ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং এই এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা অনলাইনে জুয়ার বাজি ধরার টাকা পলাতক আসামীদের সহযোগীতায় ডলারের মাধ্যমে লেনদেন ও স্থানান্তর করে থাকে। ধৃত আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা অনলাইন ভিত্তিক এসব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে তরুণদের বিভ্রান্তির মাধ্যমে দেশের আর্থিক ক্ষতি করে আসছে। এছাড়াও এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে তারা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করে আসছিলো। প্রতিদিন বিকাশ এজেন্ট নাম্বারে তিন লক্ষ টাকা থেকে চার লক্ষ টাকা লেনদেন হত। তারা বাংলাদেশ সরকার অনুমোদনহীন ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার সাইট ব্যবহার করে বিভিন্ন জুয়াড়িদের সঙ্গে অনলাইনে জুয়া খেলত।

মোঃ কামাল হোসেন (৩৩)’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে পেশায় একজন বিকাশ এজেন্ট। তার মোবাইলে bajilive এর bankok app ডাউনলোড করায় তার নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর সকলের কাছে চলে যেত। যারা বাজি ধরত তারা বিদেশে টাকা পাঠাতো। যারা বাজিতে জিতে তাদের নম্বর ও টাকার পরিমান কামালের মোবাইলে চলে যায়। তখন তাদের টাকা কামাল বিকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে তার এই এ্যাপসে প্রতিদিন ৩-৪ লক্ষ টাকা আসে। বাজিতে ৫০০-৩০০০ টাকা ধরা হয়। এখানে বাজিকরদের উপস্থিত হতে হয়না। এটি অনলাইনে খেলা হয়। যারা জিতে তাদের টাকা বিকাশে পাঠানো হয়। বিকাশের এজেন্ট এই কামাল প্রতি লক্ষে ৪০০ টাকা কমিশন পেত এবং বাকি টাকা এই চক্রের মূলহোতা পলাতক সারোয়ার এবং তার সহযোগী মিরাজ’কে হাতে হাতে দিতো। 

মোঃ টুটুল মোল্লা (৩২)’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে পেশায় একজন মুদির দোকানদার। সে প্রায় ০৬ মাস পূর্বে তার মোবাইলে 9wickets.live এ্যাপস্ ডাউনলোড করে বিভিন্ন খেলায় বাজি ধরা শুরু করে। তার এই এ্যাপসে আরো ৩-৪ জন সহযোগী নিয়ে বাজি খেলতো। সে এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার বাজি খেলেছে বলে স্বীকার করেছে। তার এ সহযোগীদের মধ্যে কেউ বাজিতে জিতলে তাদের টাকা সে পরিশোধ করত এবং তার একাউন্টে টাকা জমা থাকত।

মোঃ মিজানুর রহমান (৩৩)’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে পেশায় একজন ফলের দোকানদার। প্রায় ০১ বছর পূর্বে সে তার মোবাইলে betbuzz.com & 9wickets.live এ্যাপস ডাউনলোড করে বিভিন্ন খেলায় বাজি ধরা শুরু করে। সে নিজে বাজি খেলার পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগীদের’কে নিয়ে এ বাজি খেলায় উদ্ধুদ্ধ করত। তার এই এ্যাপসে ১০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। মিজানুরই মূলত আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় এই বাজি খেলা উঠতি বয়সী তরুণ ও যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। সে এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার বাজি খেলেছে বলে স্বীকার করেছে। তার এ সহযোগীদের মধ্যে কেউ বাজিতে জিতলে তাদের টাকা সে পরিশোধ করত এবং তার একাউন্টে টাকা জমা থাকত। যেহেতু সে ও তার সহযোগীরা বিদেশী এ্যাপস্ এ বাজি ধরত, তারা হেরে গেলে সে টাকা এ্যাপস্ এর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হতো। এভাবে তারা দেশের বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করে আসছিল।
 
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে র‌্যাব-৪ এর এরুপ অনলাইন জুয়া বিরোধী বিশেষ নজরদারি এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: