শিরোনাম

South east bank ad

অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা সহ মোট ০৭ জন‘কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩

 প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন   |   র‍্যাব

অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা সহ মোট ০৭ জন‘কে  গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩
কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকা হতে আনোয়ার হোসেন খান (৪৪)‘কে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা খোকন হাজী(৬৫)সহ মোট ০৭ জন‘কে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকা হতে গ্রেফতারসহ ভিকটিম উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৩

র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল গত ০২/০৫/২০২৪ তারিখ রাত ২০০০ ঘটিকায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আনোয়ার হোসেন খান (৪৪)’কে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা ১। হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), পিতা- হাজী বরকত উল্লাহ, সাং- চুনকুটিয়া, থানা- কেরানীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা ও তার অন্যতম সহযোগী, ২। মোঃ আরিফ হোসেন (৫৫), পিতা-মৃত আজিজুর হোসেন, সাং-চুনকুটিয়া, থানা-দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ জেলা-ঢাকা, ৩। সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), পিতা-সালাউদ্দিন, সাং-চুনকুটিয়া মধ্যপাড়া, থানা-দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা ৪। সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), পিতা-মৃত আব্দুল হাদী, সাং-হাতিরপুল, থানা-কলাবাগান, ডিএমপি, ঢাকা, ৫। মোঃ রুহুল আমিন (৬০), পিতা-মৃত আলী রাজা, সাং-তালতলী, থানা-গারচর, জেলা-চাঁদপুর ৬। মোঃ জাকির হোসেন (৩০), পিতা-আব্দুল করিম, সাং-মাদারীপুর, থানা-মাদারীপুর জেলা-মাদারীপুর এবং ৭। মোঃ স্বাধীন (৫২), পিতা-মৃত তাহের উদ্দিন সাং-চুনকুটিয়া থানা-দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ জেলা-ঢাকাদের’কে গ্রেফতার করতঃ অপহৃত ভিকটিমকে তাদের হেফাজত হতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গত ০১/০৫/২০২৪ তারিখ রাত ২০১৫ ঘটিকায় ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে গ্রেফতারকৃত খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র ভিকটিম আনোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর মালিকানাধীন ‘‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’’ অফিসের ভিতরে আটকে রাখে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভিকটিমের উপর লোহার রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং মোবাইলে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ৯৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। ভিকটিমের ছোটভাই তার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্র কর্তৃক প্রদানকৃত একটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে প্রেরণ করে। উক্ত টাকা প্রদানের পরও অপহরণকারীরা ভিকটিমের উপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে এবং তার পরিবারকে বাকি টাকা প্রদানের জন্য হুমকি প্রদান করতে থাকে। বাকি টাকা প্রদান না করলে তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। এপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় উক্ত অপহরণকারী চক্র ও ভিকটিমের অবস্থান সনাক্ত করে। ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে  রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অফিসের ভেতরে অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের ০৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার, অপহরণে ব্যবহৃত রিভলবার, ০৮ রাউন্ড রিভলবারের গুলি ও শটগান জব্দ এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব-৩।
 
গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিল। তার এ দুষ্কর্মে সহযোগী ছিল ভারতীয় নাগরিক জনৈক মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতো। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী ২০১৫ হতে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ০৭টি চালান ভারতে পাচার করেছিল। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে জনৈক নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার(৫০) ও রবি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী কাজ করতো। বিনিময়ে এদরেকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিতো। 

দীর্ঘদিন অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার ব্যবসায় সহযোগিতা করার দরুণ খোকন হাজীর সাথে মোস্তফাহাওলাদারের ওতপ্রোত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী খোকন হাজীকে বিশেষ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও পিতলের ধাতব মুদ্রা ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। যার বিনিময় মূল্য ৪০০ কোটি টাকা। খোকন হাজীর বিশ্বস্ত মোস্তফাহাওলাদার দুষ্প্রাপ্য মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা প্রদানের কথা বলে ঝালকাঠিতে নকল মূর্তি ও  একটি প্লাস্টিকের বাক্সে নকল ধাতব মুদ্রা প্রদান করে খোকন হাজীর কাছ থেকে ৯৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। নকল মূর্তি ও নকল মুদ্রা পেয়ে খোকন হাজী অত্যন্ত ক্ষিপ্র হয়ে যান এবং মোস্তফা হাওলাদারকে পাগলের মতো ঝালকাঠির বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় খুঁজতে থাকেন। কিন্তু নিরুদ্দেশ মোস্তফা হাওলাদারের কোন সন্ধান সে পায় না। উল্লেখ্য মোস্তফা হাওলাদার ভিকটিম আনোয়ার এর ভায়রা-ভাই। 

গত ০১/০৫/২০২৪ তারিখ মোস্তফাহাওলাদার ও নাঈম এর একজন সহযোগী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খোকন হাজীকে জানায় যে, মোস্তফাহাওলাদারের ভায়রা ভিকটিম আনোয়ার ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে এবং তাকে ধরতে পারলে মোস্তফাহাওলাদারের সন্ধান পাওয়া যাবে। এপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী তার অপরাপর সহযোগী আরিফ হোসেন, মিলন, মোস্তাকিম, রুহুল, জাকির এবং স্বাধীনকে নিয়ে ভিকটিম আনোয়ারকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত খোকন হাজীর নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীরা একটি সাদা মাইক্রো বাসে করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভিকটিমকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবী করে। 

খোকন হাজী একজন ঠিকাদার এবং মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। তার ০২ ছেলে এবং ০১ মেয়ে রয়েছে। ঠিকাদারী ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিল। উক্ত অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত তার অপরাপর সহযোগীরা সকলেই তার অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের অন্যতম সহযোগী। 

উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর এবং গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: