হার্ডলাইনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
আজহারুল ইসলাম বিপ্লব (নেত্রকোনা) : জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশণা অনুযায়ী তৈরি করা ‘বেতাই খাল থেকে প্রকৃত ভূমি রেকর্ড অনুয়ায়ী ‘বেতাই নদীথ হিসেবে পুণ:স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মোঃ আবদুর রহমান।
জেলা প্রশাসক জানান,বেতাই নদী কি ভাবে খালে পরিনত হলো রেকর্ড যাচাই করা হচ্ছে এবং জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কীভাবে নদীকে খাল বানানো হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নতুনভাবে এই প্রজেক্টের নামও সঙ্গায়িত করা করা হবে।
এদিকে নানা আলোচনা সমালোচনা, সভা সমাবেশ, মানববন্ধণ এবং অভিযোগের পর অবশেষ বেতাই নদী রক্ষায় আন্দোলনকারীদের জয় হবে বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। সত্য ও প্রকৃত ইতিহাস ও রেকর্ড অনুযায়ী বেতাই নদীর নামটি পূণ:সংযোজনের জন্য প্রশাসনের মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে নেত্রকোনা ও কেন্দুয়া উপজেলার আন্দোলনকারী অনেকে।ইতোমধ্যে বেতাই নদী রক্ষায় গণমাধ্যমে নানা সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী বেতাই নদীকে খাল দেখিয়ে এলজিইডিথর মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে খাল খনন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ চলছে। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদী (খাল) খননে মোট বরাদ্দ ২ কোটি ৮ লাখ টাকা জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। ভৌগোলিক ইতিহাস বিকৃতি করে প্রকল্পে বেতাই নদীর ইতিহাস বিকৃতি করে ‘খালথ দেখানো হয়েছে। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে নেমেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
ইতিহাস বিকৃতি করে বেতাই নদীকে ‘খালথ দেখানো এবং খনন কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে এলাকাবাসী স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক পৃথক অভিযোগ পত্র দাখিল করেছে। যা এখন তদন্তাদীন রয়েছে।
জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোণা ও রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রশস্ত বেতাই নদীকে খাল বানিয়ে তা খননের প্রকল্প গ্রহণ করায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সামাজিক-সচেতন মহল। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঐতিহ্যবাহী বেতাই নদীর নাম পরিবর্তন করে খাল খননের প্রকল্প এনে নামকাওয়াস্তে মাটি কেটে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খননকাজেও নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন মানববন্ধনকারীরা।
বেতাই নদীটি উপজেলার একটি ঐতিহ্যের নাম। এলাকাবাসী এই নামটি বিলুপ্ত হতে দেবে না। প্রকল্পটি নদী খননের প্রকল্প করতে হবে। অন্যতায় এলাকাবাসী আরো কঠোর কর্মসূচির আভাস দিয়েছেন।
এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে খাল ও পুকুর খনন প্রকল্পের আওতায় বেতাই নদীতে ১৬টি প্যাকেজে ১১ কিলোমিটার বেতাই খাল খননের প্রকল্প প্রহণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্পের খনন কাজটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় ‘বেতাই খাল খনন সমিতিথ নামে একটি সংগঠন।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হাসান বলেন, এটি যে নদী তা আমাদের জানা ছিল না। আর তখন কেউ বলেনি। খননকাজ এখনো শেষ হয়নি। আরো কিছু স্থানে খননকাজ বাকি রয়েছে। নদী আর খালের নামের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষে সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকল্পে খাল লেখা অথচ সান্দিকোনা ভূমি অফিস সূত্র জানান, ১ নং বিআরএস খাস খতিয়ানে মোট ১২ একর ১৭ শতাংশ জমিতে শ্রেণী নদী উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে বালুচর মৌজার জে,এল,নং ১১৯, দাগ নং ৫৭৭- এ ৮ একর ৩০ শতাংশ এবং পেরী সাহিতপুর মৌজায় ৩ একর ৮৭ শতাংশ। পেরী সাহিতপুর মৌজার জে,এল,নং ১১৪, দাগ নং ৩৪৬ এ ১ একর ২ শতাংশ ও ১৪৭ দাগে ২ একর ৮৫ শতাংশ । উভয় জে এল নং এর দাগ অনুযায়ী শ্রেণী নদী উল্লেখ রয়েছে এবং মালিক হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক নেত্রকোনা উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের(এলজিইডিথর) নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ড জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চিঠি প্রাপ্তির কথা জানিয়ে বলেন,এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।