South east bank ad

কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

 প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০৪ অপরাহ্ন   |   র‍্যাব

কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব
প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া আলোচিত কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও সম্পাদক লাকী আক্তার’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ঃ অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা উদ্ধার ও ০২ টি দামী গাড়ী জব্দ।
 
সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর পেশাদার প্রতারক চক্র। অতি সম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব। এই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। মিরপুর এলাকার কতিপয় ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখ ১৩.৩০ ঘটিকা হতে ২৬ অক্টোবর ০৮.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মহানগরীর মিরপুর মডেল থানাধীন ১১/এ, রোড নং-৬, প্লট-৪, নান্নু সুপার মাকের্টে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারণা দায়ে “কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” এর চেয়ারম্যানের অন্যতম সহযোগী এবং প্রকল্প পরিচালক মোঃ শাকিল আহম্মেদ (৩৩) সহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। অভিযানকালে সভাপতি জসিমসহ সমিতির কার্যকরী কমিটি অন্যান্য সদস্যদের পাওয়া যায় নি। উক্ত অভিযানের ঘটনায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়ায় বহুলভাবে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।  

উক্ত অভিযানের পর পরই কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড হতে প্রতারিত অসংখ্য ভুক্তভোগি র‌্যাব-৪ এর কাছে অভিযোগ জানাতে থাকে। অসহায় গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সা ও ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ যারা না বুঝে উক্ত প্রতিষ্ঠানে সমিতি ও অবৈধ ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অর্থ জমা করেছিল তারা হতাশা প্রকাশ করে বারংবার অভিযোগ জানায়। অভিযানের শুরু থেকেই উক্ত সমিতির চেয়ারম্যান জসিম গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে চলে যায়। পলাতক জসিমকে গ্রেফতার করতে র‌্যাব-৪ গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। গোয়েন্দা নজরদারি ও স্থানীয় সোর্সের সহায়তা জানা যায় গ্রেফতারকৃত জসিম সস্ত্রীক টাঙ্গাইলে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল ১০ঃ৩০ ঘটিকা হতে অদ্য ০৪ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখ ০১.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি আভিধানিক দল টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর চেয়ারম্যান প্রতারক মোঃ জসিম উদ্দিন (৫৪) এবং তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার লাকি (৪৫), জেলা-মুন্সিগঞ্জদ্বয়’কে গ্রেফতার করাতে সক্ষম হয় র‌্যাব-৪। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য মতে রাজধানীর বনানী থানাধীন জসিম ওভারসীজ এর অফিস এবং ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০১ টি পিস্তল, ০২ রাউন্ড গুলি, ২৯৭ পিস ইয়াবা, ০১ টি মোবাইল ও ৯৬০০০/- জাল টাকা উদ্ধার এবং ০২ টি দামী গাড়ী জব্দ করা হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় মূল অভিযুক্ত আসামী জসিম উদ্দিন এর নিজ জেলা মুন্সিগঞ্জ। সে নিজেকে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশ করে বলে প্রচার করলেও আদতে সে এলাকার একটি স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। তার ২ জন স্ত্রী এবং ২ পুত্র সন্তান রয়েছে। পূর্বে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে রিপ্রেজেন্টিটিভ হিসেবে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় “কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন লাভ করে ২০০৬ সালে। এবং ২০১৩ সালে সমিতিটির পূনর্নিবন্ধন হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮/২০১৯ সালের তাদের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৭ জন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিয়ম বহিভর্‚তভাবে ২৫-৩০ হাজার সদস্য গ্রাহক সংগ্রহ করেছে। সে কোম্পানীতে নতুন নতুন সদস্য আনয়নের লক্ষ্যে পুরাতন সদস্যদের চাপ প্রদান করতো এবং তাদের মুনাফার লোভ দেখাতো। তার এই “কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ” এর আনুমানিক ২৫-৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে যারা ডিপিএস ও এফডিআর এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে এবং যার পরিমান আনুমানিক শতকোটির উপরে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। টাকা চাইতে গেলে গ্রাহকদের হুমকি ধামকি, মারধর করা ও মামলার ভয় দেখানো হতো। ভ‚ক্তভোগীদের মারধরসহ শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো। কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এ ভুক্তভোগীদের এফডিআর/ ডিপিএস এর টাকা সড়িয়ে জসিম নিজ, স্ত্রী ও সন্তানের নামে ঢাকা ও গাজীপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, কোটি টাকা দামের প্রাডো জীপ গাড়ী ও প্রাইভেটকার , ডায়াগনষ্টিক সেন্টারসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।  জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় আলোচিত কর্ণফুলি সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন নিজে, সহ-সভাপতি তার শ্বশুর মোতালেব, সাধারণ সম্পাদক স্ত্রী লাকী আকতার, যুগ্মসম্পাদক শ্যালিকা লাভলী আক্তার ও কোষাধ্যক্ষ তার আত্মীয় শাহেলা নাজনীন ও সদস্য তার শ্যালক কামাল। আসলে প্রকৃতপক্ষে সমিতি কমিটি পর্ষদের সবাই তার পারিবারিক সদস্য। টাকা আত্মসাতের উদ্দেশেই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পরিবারের সদস্য দ্বারা সমিতির কমিটি গঠন করে প্রতারণা করে আসছিল। 

তাদের বিরুদ্ধে গত ২৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ইতোপূর্বে ০৪টি প্রতারনার মামলা রুজু করা হয়েছে। ফতারকৃত জসিম ও লাকী আক্তারের  বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, প্রতারনা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরো নতুন ০৪টি মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ অসাধু সংঘবব্ধ অস্ত্রধারী প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: