South east bank ad

২৯ বছর ধরে পলাতক আসামীকে মিরপুরের থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪

 প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:১৮ অপরাহ্ন   |   র‍্যাব

২৯ বছর ধরে পলাতক আসামীকে মিরপুরের থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪
র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।

ঘটনার বিবরনঃ ২৯ বছর পূর্বে ২৪ জুন ১৯৯২ তারিখ বুধবার রাত আনুমানিক ০৮.৩০ ঘটিকার সময় বাজার থেকে ফেরার পথে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার গুটিবাড়ী সরকারপাড়া এলাকায় জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পনা করে ভিকটিম মোঃ ইব্রাহিম @ ইব্রা’কে কয়েকজন মিলে ধারলো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে মমূর্ষ অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিলে চিকিৎসারত অবস্থায় ০১ দিন পরে মৃত্যুবরণ করে। পরবর্তীতে মৃতের আপন বড় ভাই মোঃ মফিজ উদ্দিন (বর্তমানে মৃত), পিতা- মৃত- আসের উদ্দিন, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানায় মোঃ আবুল কালাম আজাদসহ ০৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ০৯ তারিখ-২৭/০৬/১৯৯২ইং, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। 

চার্জশিট, রায় ও ওয়ারেন্টঃ অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আবুল কালাম আজাদসহ এজহারনামীয় ৩ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে একই বছর ডিসেম্বর মাসে চার্জশীট দাখিল করেন এবং এজাহার নামীয় বাকি ০৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। পরবর্তী চার্জশিটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত, রংপুর মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম ইব্রাহিম@ ইব্রা হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে চার্জশীটে অভিযুক্ত ০৩ জনকে গত ১৩/০৪/২০০৩ তারিখে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। রায় ঘোষনার সময়, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ফারাজ উদ্দিন (৫০) গ্রেফতার থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত অপর দুই আসামী আবু @ আবু ডাকাত ও মোঃ আবুল কালাম আজাদ পলাতক ছিল। পরে আসামী আবু @ আবু ডাকাত’কে থানা পুলিশ গ্রেফতার করতে পারলেও আবুল কালাম আজাদ পলাতকই থেকে যায়। পলাতক আসামী মোঃ আবুল কালাম আজাদ ঘটনার পর থেকেই এমনকি সাজা হওয়ার পর র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পলাতক ছিল।

র‌্যাবের অভিযানঃ পলাতক আসামী মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত  সাজা ওয়ারেন্ট ভিত্তিতে  উক্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা র‌্যাব-৪ কে অধিযাচন পত্র প্রেরন করলে র‌্যাব-৪ উক্ত আসামী’কে গ্রেফতারের জন্য অবস্থান শনাক্তে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ ভোর ০৩.৫০ ঘটিকার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা মহানগরীর মিরপুর মডেল থানাধীন পাইকপাড়া আহম্মেদ নগরস্থ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আবুল কালাম আজাদ (৫১), পিতা- মৃত ইউসুপ আলী, সাং-গুটিবাড়ী কবিরাজ পাড়া, থানা- মিঠাপুকুর, জেলা- রংপুর (এজহারনামীয় ৩নং আসামি) কে গ্রেফতার করতে করতে সমর্থ হয়।

আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী মা-বাবার একমাত্র সন্তান । আসামী মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি ১৯৮৭ সালে দাখিল, ১৯৮৯ সালে আলিম, ১৯৯১ ফাজিল পাশ করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্তে¦ও হত্যা মামলার আসামী হওয়ার কারনে এবং পালিয়ে পালিয়ে থাকার দরুন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় চাকুরী করতে পারে নি। গত ২০১৪ সালে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। গত ২০০৭ সালে আসামী নাম পরিচয় গোপন কওে তার পার্শ্ববর্তী বদরগঞ্জ থানার বাতাসন গ্রামে সাবানা (১৯) নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় পালিয়ে পালিয়ে থাকার কারনে স্ত্রীকে সময় দিতে না পারায় বিয়ের ৫/৬ মাস পরেই তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। তাদের কোন সন্তানাদি নেই।

আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। ১৯৯২ সালে মামলা রুজু হওয়ার পর হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত সে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে। পরিচিতি লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য সহজে আত্মগোপন করার লক্ষ্যে ২০০১ সালে ঢাকায় চলে আসে। ২০০১ সাল থেকে অদ্যবধি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে আত্মগোপন করে রাখে। সেই সাথে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এ নির্মান শ্রমিক হিসাবে কাজ করে আসছিলো। সর্ব শেষ ঢাকার মিরপুর মডেল থানা এলাকার আহম্মেদনগরে অবস্থান করিয়া একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ে কাজ করে।

নতুন নামে এনআইডি তৈরীঃ আসামী পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য আজাদ মিয়া নাম ধারন করে মিরপুর থানাধীন আহম্মেদনগর কে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে।  উল্লেখ্য যে, স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রংপুর, মিঠাপুকুর এবং গ্রাম -গুটিবাড়ী কবিরাজ পাড়া ব্যবহার করেন। 

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: