শিরোনাম

South east bank ad

দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের পথে সরকার

 প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রণালয়

দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের পথে সরকার

আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও রাষ্ট্রের সংস্কারপ্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ বাস্তবায়নের দিকে যাবে নাকি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে এগোবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপরই নির্ভর করছে। তবে সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনে যেতে পারে সরকার। কারণ রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যেসব প্রস্তাব রেখেছে, তাতে ইতিবাচক জবাবের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশও ঘটছে।
সে ক্ষেত্রে সংস্কার প্যাকেজ সংক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

গত ১৭ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে।
কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে।’ এ ছাড়া নির্বাচন আসন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানা রকম সমস্যা হবে, নানা রকম চাপ আসবে।

এ ছাড়া গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তিনি জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে।
তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগামী ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের কথা বলেছেন। কখনো আগামী বছরের জুনের বদলে মার্চের কথাও বলেছেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশন চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। গত ১০ মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই সময়সীমা যাতে পার না হয় সে জন্য ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

এদিকে নির্ধারিত সময়ের (২০ সেপ্টেম্বর) আগেই সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের প্রস্তাবগুলোতে মতামত জানানোর পাশাপাশি নতুন প্রস্তাবও দিতে পারবে। প্রস্তাব বাস্তবায়নের কৌশল সম্পর্কেও মতামত চাওয়া হয়েছে। যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছবে, সেগুলো বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

আজ বিএনপি ও এনসিপি লিখিত মতামত জমা দেবে : গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে খেলাফত মজলিস ১৪০টি এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১৪৭টি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে। আজ রবিবার সংলাপে অংশ নেবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এ ছাড়া আজ দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লিখিত মতামত জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে কিংবা নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে—এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া; তাই সংস্কার এবং নির্বাচন দুটিই একসঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতে পারে। নির্বাচিত সরকার পরে এটা বাস্তবায়ন করবে।

তিনি বলেন, এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। এরপর নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনা হয়। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন সংস্কার বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই সুপারিশের আলোকে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হলেও অর্ধেক দল এখনো মতামত দেয়নি।

গত ১০ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের ডিসেম্বরের টাইমলাইন অতিক্রম করতে চায় না।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঐকমত্য চায় কমিশন : গতকাল সকালে জাতীয় সংসদের এলডি হলে প্রথমে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ও পরে লেবার পার্টির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সংলাপে চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

সংলাপে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনারা মতামতগুলোর অনেক ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের কিছু ভিন্নমত আছে, বক্তব্য আছে, সেগুলো আমরা শুনব। আমরা মনে করি, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা একটা জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা এই আলোচনা শুরু করেছি। দীর্ঘ সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে আপনারা আন্তরিকভাবে মতামত দিয়েছেন। এসব মতামতের ভিত্তিতেই আমাদের আলোচনা এগিয়ে যাবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা চলবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য।’

বৈঠক শেষে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪০টিতে আমরা একমত হয়েছি। ১০টিতে মতৈক্য হয়নি, আর ১৫টিতে আংশিকভাবে সম্মত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার ১০ মাসে করা সম্ভব। এটা অধ্যাদেশ জারি করে করা উচিত। সংস্কার নির্বাচনের আগেই সম্ভব।’

গণপরিষদের পক্ষে নয় খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিস গণপরিষদের পক্ষে নয় বলে জানান আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪০০ আসনে নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছি। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখার পক্ষে রয়েছি। এ ছাড়া উচ্চকক্ষে (সিনেটে) সংখ্যালঘুদের ১ শতাংশ ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের অনুরোধ জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানে মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা বিশ্বাস রাখতে হবে। বহুত্ববাদ (সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব) বাদ দিতে হবে। আমরা বলেছি গণতন্ত্রই এনাফ, বহুত্ববাদের কোনো প্রয়োজন নেই।’ তিনি আরো বলেন, ইসলামের স্পষ্ট বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না, তা সংবিধানে বিধান থাকতে হবে। সংবিধান সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব, তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের মতামত নেওয়া যেতে পারে।

BBS cable ad