শিশুকাল থেকেই বাবা-মায়ের পরম যত্নে বেড়ে ওঠেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান- দেড় বছরের ভাইজান
ভাইজানের বয়স তখন দেড় বছর। কাকা পিরোজপুরে একটি চাকুরী করতেন। এমন সময় আম্মার একবার টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়। পুরো মুখ ফুলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে আম্মা ঠিকমত কথা বলতেই পারতেন না। বংশের প্রথম পুত্র সন্তান ভাইজান তখন এক পা দু পা করে ঘর ও সারা উঠানে ঘুর ঘুর করেন।
একদিক আম্মার এমন অবস্থা অন্যদিকে কাকা বাড়ীতে নাই। বাড়ীর পাশে তখন ডাক্তার বলতে প্রয়াত শামসু মুন্সী কাকা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তিনি মাটি পড়া দিলেন আম্মাকে আর কয়েক দাগ মিক্সার। কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হলো না।
আম্মার এই অবস্থায় ভাইজানের পুরোটাই খেয়াল রাখতে হতো আমার মা ও আমার দাদীকে। আমার মা-বাবার ঘরে তখনও কোন সন্তান আসেনি তাই ভাইজানের যত্নের কোন ত্রুটি হতো না। আর দাদী তার বংশ রক্ষার প্রদীপ হাতে পেয়ে কি যে খুশি ছিলেন তা বলে বুঝানো যাবে না। এই অবস্থায় একদিন আম্মা মাকে ইশারায় খুব কাছে ডেকে নিয়ে আস্তে আস্তে বললেন - রাঙা বৌ আমার হাবিবের জন্য তোর যে কি কষ্ট হচ্ছে কয়দিন..। মা একটু বিব্রত হয়ে বলেন- ‘দেহেনতো সাইজে বুজি আপনি কি কন। আমার আবার কি কষ্ট, আমারতো ভাললাগতিছে। আপনি কোন চিন্তা কইরেননাদি।’
ভাইজানকে গ্রামের পরিবেশে তখন যেভাবে যত্ন করা হতো তা এখনকার অনেক শহুরে বাচ্চাদের বেলাতেও করা হয় না। দেড় বছরের ভাইজান তখন বার্লি খেতেন ও ফিডারে গরুর দুধ খেতেন। জন্মের পর থেকেই ভাইজানের সবকিছুই ছিলো আলাদা। বিছানাপত্র থেকে শুরু করে কড়াই, হাড়ি, বাসনসহ সব কিছু। বার্লি রান্না করার পরপরই কড়াই ভালোকরে পরিষ্কার করে রাখা হতো, দুধ খাবার ফিডারকে গরম পানি ও ব্রাস দিয়ে ঘসে পরিষ্কার করা হতো। ছাই কম উড়বে ও ভাইজানের খাবার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রান্নায় পাটখড়ি ব্যবহার করা হতো। কাকা মাঝে মাঝে নিজেই হাড়ি-বাসনগুলোর পরিচ্ছন্নতা চেক করতেন, সেই ভয়ে আম্মা, মা ও আমার দাদী সর্বদা কটস্থ থাকতেন।
ভাইজানকে শিশুকাল থেকেই বিশেষ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়। দেড় বছর বয়সী ভাইজানকে বার্লি, গরুর দুধ ও বাচ্চা মুরগীর মাংসের পাশাপাশি কাটাবিহীন শোল মাছ, কইমাছের পিঠের অংশ, শিং মাছ ও মাগুর মাছকে সিদ্ধ লাউয়ের সাথে মেখে খাওয়ানো হতো। ভাইজানের কোন কিছুতে যেনো কোন কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে কাকার যেমন তদারকি ছিলো তেমন ভাইজান ছিলেন আমার দাদীর জানের জান, বুকের মানিক। তাই আদর-যত্নের কোন ঘাটতি ছিলোনা ভাইজানের।
কাকা প্রায় তিন মাস পর পিরোজপুর থেকে বাড়িতে আসেন। আম্মা তখনো টনসিলের ব্যাথায় কাতর। পরে শহর থেকে আরো একটু ভালো ওষুধ এনে খাওয়ানোর পর আম্মা সুস্থ হন।
বি:দ্র:
প্রয়াত ‘আম্মা’ আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ও মাতৃসম সেজে চাচী অর্থাৎ ভাইজানের রত্নগর্ভা মা।
(চলবে)
লেখক : এম এম মাহবুব হাসান , ব্যাংকার