মাস্টার গ্রুপের প্রধানসহ গ্রেপ্তার ১০
ঢাকার কেরানীগঞ্জে নির্জন বাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি করত মাস্টার গ্রুপ নামে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাত দল। ডাকাতির ঘটনায় তারা চক বা খোলা বিলের পাশে নির্জন বাড়িকে টার্গেট করত। ডাকাতির সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাছ ধরার জাল সঙ্গে রাখত তারা। কোথাও পুলিশের টহল টিম বা চেকপোস্টে ধরা পড়লে তারা পেশায় জেলে এবং রাতে মাছ ধরতে যাচ্ছে বলে জানাত।
দুর্ধর্ষ এই ডাকাত দলের প্রধান ইলিয়াস মাস্টারসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত দলের অপর সদস্যরা হলেন, শাহিন ওরফে ভাগিনা, সোহেল, বাবুল, আসাদ, রাশেদুল ওরফে বিটু, ওহাব ওরফে নানা, সামাদ, দীপু ও মকবুল ওরফে মঙ্গল।
মো. আসাদুজ্জামান জানান, শীতের তীব্রতা ও কুয়াশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন বলসুতা, অভ্রখোলা এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন বাস্তা ইউনিয়নের বিভিন্ন নির্জন এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বাড়িতে সিরিজ ডাকাতি করে আসছিল। সশস্ত্র এই ডাকাতদল গভীর রাতে বাড়ির গ্রিল কেটে ঢুকে পড়তো এবং দেশীয় অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ফেলতো। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে এবং নারীদের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলতো। তারপর ডাকাতদলের অন্য সদস্যরা মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির আলমিরা, শোকেসসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে মূল্যবান স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও দামি কাপড়চোপড় এমনকি টেলিভিশন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যেত। ডাকাতরা বাড়ির সবার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বাইরে ফেলে দিয়ে যায়। কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদল ডাকাতি করে ফেরার সময় স্থানীয় কারো বাধার সম্মুখীন হলে একের পর এক ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যেতো। দুর্ধর্ষ এসব ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেয় ডাকাত দলের সর্দার যাকে ডাকাত দলের সদস্যরা ‘মাস্টার’ বলে সম্বোধন করতো। ডাকাতির জন্যই তাকে এ উপাধি দেওয়া হতো। এসব ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ৩টি ডাকাতির মামলা হয়।
তিনি আরও জানান, মামলার পর ঢাকা জেলা পুলিশের একটি চৌকস তদন্ত দল দুর্ধর্ষ ডাকাত মাস্টার গ্রুপকে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ শুরু করে। তদন্ত টিম প্রতিটি ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে এবং ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে, ডাকাত সর্দার 'মাস্টার' এর নেতৃত্বে একটি ভয়ংকর ডাকাতদল সবগুলো ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। একপর্যায়ে তদন্তদল তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত দুর্ধর্ষ এই ডাকাত চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে মাস্টার গ্রুপের প্রধান ইলিয়াসসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে ডাকাতদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত অন্যান্য মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।