South east bank ad

ঢাবি ছাত্রের মৃত্যুর তদন্ত : দেশে প্রথমবারের মতো এলএসডি মাদকের সন্ধান

 প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১০:২০ অপরাহ্ন   |   ডিবি

ঢাবি ছাত্রের মৃত্যুর তদন্ত : দেশে প্রথমবারের মতো এলএসডি মাদকের  সন্ধান
বুধবার (২৬ মে) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলএসডিসহ তিনজনকে আটক করে ডিবি রমনা বিভাগ। আটকরা হলেন—সাদমান সাকিব ওরফে রূপল (২৫), আসহাব ওয়াদুদ ওরফে সূর্য (২২) ও আদিব আশরাফ (২৩)। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ২০০ ব্লট এলএসডি উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য মানুমানিক ছয় লাখ টাকা। মাদক এলএসডি ব্লট আকারে পাওয়া যায়, যা খুব ছোট কাগজের টুকরো সদৃশ মাদক মিশ্ৰিত বস্তু। ওই ব্লটগুলো জিহ্বার নিচে বা উপরে দিয়ে সেবন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি জানান, আত্মহত্যা করা ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানে বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাবির আইবিএর বহিষ্কৃত ছাত্র সাদমানকে ধানমন্ডি থেকে আটক করা হয়। তিনি বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএর শিক্ষার্থী।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি বাংলাদেশে একেবারেই নতুন একটি মাদক। দাম বিবেচনা করলে এটি সাধারণত উচ্চবিত্তের মাদক, কারণ প্রতি ব্লট বিক্রি হতো তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যায়ে ক্রেতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে মাদকটির ক্রেতাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব। যেহেতু এটি বিদেশ থেকে আসে সেখান থেকে সাপ্লাই বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
 দেশে প্রথমবারের মতো এলএসডি মাদকের (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডাব বিক্রেতার দা দিয়ে নিজ গলায় আঘাত করে হাফিজুর রহমান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ বিষয়টি সামনে আসে। 
ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি সেবনে হ্যালুসিনেশন হয়। এলএসডি ব্যবহার করলে মানুষের স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে যায়। নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ কেউ মাতৃগর্ভের স্মৃতিও মনে করতে পারেন। তবে সে সব স্মৃতির ভার অধিকাংশ মানুষই সহ্য করতে পারেন না। ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অধিকাংশ মাদকগ্রহণকারীই স্মৃতির চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশের আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এলএসডি সেবন করেছেন এমন অনেকেই এমন দাবি করে থাকেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, হ্যালুসিনেশনই এসব অনুভূতির মূল কারণ।
প্রচণ্ড উত্তেজনার সঙ্গে এই মাদক চিন্তা, অনুভূতি ও পারিপার্শ্বিক চেতনাকে পরিবর্তন করে দেয়। তবে আত্মহত্যা করা ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের এলএসডি মাদক সেবনের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই মাদকের তথ্য পাওয়া যায়।





এলএসডি দামি একটি মাদক। এলএসডি মেশানো এক-একটি ছোট ছোট টুকরো ব্লটিং পেপারের দাম কয়েক হাজার টাকা। ভারতের অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর এই মাদকটি আলোচনায় আসে। তার বিরুদ্ধে এই মাদক নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

সাদমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে মেইল ও চিঠির মাধ্যমে ডাক টিকিটের মতো দেখতে এই মাদক ৮০০-১০০০ টাকায় একটি ব্লট কেনেন। নেদারল্যান্ডসের এক নাগরিকের সঙ্গে টেলিগ্রাম অ্যাপসে যোগাযোগ করে পেপালের মাধ্যমে মাদকের টাকা পাঠাতেন এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন।

‘আপনার আব্বা’ নামে সাদমানের একটি ফেইসবুক আইডি রয়েছে। তিনি ‘Better brawry and beyound’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনা করেন, যেখানে প্রায় এক হাজার সদস্য রয়েছে। সাদমান, আসহাব ও আদিব এই তিন জন মিলে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডি বিক্রি করতেন। তারা গাঁজা পাতার নির্যাস দিয়ে কেক তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করতেন। সাদমানের দেওয়া তথ্যমতে আসহাব ও আদিবকে আটক করা হয়।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানায়, এলএসডি সেবন করলে যে কারো মাথা ভার হয়ে যাবে। হ্যালুসিনেশন দেখা দেবে। সেবনকারী অত্যন্ত হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক আচরণ করে। একটি এলএসডি ব্লট সেবন করলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত সেবনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্তও প্রতিক্রিয়া হয়।



১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রথমদিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে ওষুধটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে একে নিষিদ্ধ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এসব দৃশ্য সবসময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

তারা বলেন, এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয় যাকে অনেকসময় ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে।


BBS cable ad