দুদকের মামলায় পিকে হালদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বিডিএফএন লাইভ.কম
গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ রোববার (২৭ মার্চ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এ পরোয়ানা জারি করেন।
পিকে হালদার ছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানাকৃত অপর আসামিরা হলেন- পিকে হালদারের মা লিলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
এদিন কারাগারে আটক আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের উপস্থিতিতে এ মামলার অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করেন আদালত। এ সময় পলাতক পিকে হালদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ মে দিন ধার্য করেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পিকে হালদার নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় ঐ চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। আর তিনি দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে। পলাতক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, পিকে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এই সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই সম্পদের মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এই সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে পি কের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, প্রশান্ত তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন। যার দাম ১২ কোটি টাকা। আর পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। প্রশান্ত তার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর আটতলা হোটেল (র্যাডিসন নামে পরিচিত) তৈরি করেছেন। যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পিকের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী এবং অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন, এর দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে বলেছে, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন। বাংলাদেশি টাকায় তা দাঁড়ায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা।