২৪৪ পোশাক কারখানায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বকেয়া বিল তিতাসের
দেশে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ২৪৪টি কারখানার কাছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিডেটের বকেয়া বিলের পরিমাণ ১৪২ কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। চলতি বছরের মে পর্যন্ত কারখানাগুলোর কাছে এ পরিমাণ বকেয়া জমেছে তিতাসের।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাবে পোশাক শিল্প মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যেই দেশে করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ চলে আসায় তাদের পক্ষে বকেয়া বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে তিন মাসের বেশি বকেয়া পরিশোধ করা না হলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা উল্লেখ করে তিতাসের পক্ষ থেকে বিজিএমইএকে সতর্ক করা হয়।
তিতাসের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ২৪৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে তিতাসের প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে। যথাসময়ে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।
তিতাসের তাগাদা পাওয়ার পর বিজিএমইএর নেতারা এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে তিতাসের কাছে একটি চিঠি দেন। এ চিঠিতে বলা হয়, কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বকেয়া পরিশোধের জন্য কারখানা মালিকদের আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার আবেদন করেন পোশাক শিল্প মালিক-নেতারা।
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমানের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের সদস্যভুক্ত পোশাক শিল্প মালিকরা নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। এর আগে তারা নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করে আসছেন উল্লেখ করে আরও বলা হয়, আমাদের সদস্যরা নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করে আসছেন। কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সামাল দিতে গিয়ে গ্যাস বিল বকেয়া পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে তিতাস কর্তৃপক্ষকে কারখানা মালিকদের সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
তিতাস গ্যাসের বকেয়া বিল তালিকার ব্যাখ্যা দিয়ে বিজিএমইএর নেতারা বলেছেন, তিতাসের ২৪৪টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে ১১৫টি প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএর সদস্যই নয়। এর মানে দাঁড়ায়, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১২৯টি পোশাক কারখানার কাছে তিতাস বকেয়া বিল পাবে। ওই ১২৯টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের তিন মাসের কম এবং ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের চার মাসের কম গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে।
এ পরিসংখ্যান মতে, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১২৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছে তিতাসের মোট বকেয়ার পরিমাণ ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
বিজিএমইএর চিঠিতে আরও বলা হয়, তিতাসের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সংগঠনভুক্ত ১২৯টি প্রতিষ্ঠানের মালিককে গ্যাস বিল পরিশোধের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের বায়ারের মাধ্যমে অর্ডার, উৎপাদন, জাহাজীকরণ এবং এক্সপোর্ট বিল পাওয়া পর্যন্ত চার মাস (১২০ দিন) সময় লাগে।
এদিকে তিন মাসের বেশি (৯০ দিন) কোনো প্রতিষ্ঠানের গ্যাস বিল বকেয়া পড়লে তিতাস ওই প্রতিষ্ঠানের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার পরিমাণ তিন মাসের বেশি হয়ে গেছে, তাদের বকেয়া পরিশোধের জন্য আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার আবেদন করেছি। করোনা পরিস্থিতিতে তিতাস আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশা করি।