South east bank ad

৪৪তম বিসিএসে ৪৩০ পদ বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাড়া মেলেনি

 প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৬ অপরাহ্ন   |   মন্ত্রণালয়

৪৪তম বিসিএসে ৪৩০ পদ বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাড়া মেলেনি

সরকারি চাকরির কোটা ঘিরে গত বছর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বিসিএসের কোটা ঘিরে এই আন্দোলনের শুরু। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের পতন হয়। সেই বিসিএসেই এখন বঞ্চনা চলছে বলে অভিযোগ করছেন চাকরিপ্রার্থী ও জুলাই আন্দোলনকারীরা।
ফলে চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবীরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; চার লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ শূন্য। এর মধ্যে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের দুই লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে।
এসব পদের বিপরীতে কর্মরত এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন, ফাঁকা ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

আগের কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩৮, ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে বেশি প্রার্থী সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ৪৪তম বিসিএসে ৪৩০টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এতে সায় দেয়নি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ফলে বিজ্ঞাপিত পদ ধরেই গত সোমবার রাতে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

পিএসসি সূত্র জানায়, ৪৪তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদ ছিল এক হাজার ৭১০টি, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ২০ জন যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় এক হাজার ৬৯০টি সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ৪৩তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদ ছিল এক হাজার ৮১৪টি, সুপারিশ করা হয়েছে দুই হাজার ১৬৩টি পদে। ৪১তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদ ছিল দুই হাজার ১৬৬টি, সুপারিশ করা হয়েছে দুই হাজার ৫২০ পদে। ৪০তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদ ছিল এক হাজার ৯০৩টি, সুপারিশ করা হয়েছে এক হাজার ৯৬৩ পদে। ৩৮তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদ ছিল দুই হাজার ২৪টি, সুপারিশ করা হয়েছে দুই হাজার ২০৪টি পদে।
তবে ৩৮তম বিসিএসের মধ্যে ৪২ ও ৩৯তম ছিল বিশেষ বিসিএস।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিএসসিতে দীর্ঘ জটের কারণে একটি বিসিএস শেষ হতে তিন-চার বছর সময় লেগে যায়। এতে একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির সময় যত শূন্য পদ থাকে, ওই বিসিএসের ফল প্রকাশের সময় অনেক বেশি পদ শূন্য হয়ে যায়। ফলে সাধারণত পরবর্তী বিসিএসের জন্য ঘোষণা দেওয়া পদগুলো হাতে রেখে সুপারিশের সময় পদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পান। অন্যদিকে আবার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে খুব বেশি শূন্যতার সৃষ্টি হয় না।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে কয়েকটা বিসিএস জমে গেছে। এখন যদি ক্যালকুলেশন করে দেখা যায়, পদ শূন্য আছে, কিন্তু অন্য বিসিএসে ইফেক্ট করবে না, তাহলে সরকার চাইলে নতুন পদ যুক্ত করতে পারে। এতে একদিকে কিছু মেধাবীর চাকরির সংস্থান হবে, আবার শূন্য পদগুলোও পূরণ হবে।’

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন শূন্য পদসংখ্যা পর্যালোচনা ও সমন্বয় করে একটি প্রস্তাব তৈরি করে, যা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবে দেখা যায়, ৪৪তম বিসিএসে ৪৩০টি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বিসিএস সাধারণ শিক্ষায় ১৮৭টি পদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে স্বাস্থ্য (পরিবার ও পরিকল্পনা) ৫৪টি পদ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বিসিএস (কর) ৫৪টি পদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিসিএস (মৎস্য) ৩০টি পদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিসিএস (কৃষি) ৬৮টি পদ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বিসিএস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক) দুটি পদ ও বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) ৯টি পদ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে বিসিএস (সড়ক ও জনপথ) ২৬টি পদ। ৪৪তম বিসিএসে এই ৪৩০টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এই সারসংক্ষেপে গত ১৯ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষর করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৪৪তম বিসিএসের জন্য ৪৩০টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হলেও এতে সাড়া মেলেনি। ফলে ৪৪তম বিসিএসে বিজ্ঞাপিত পদ ধরেই ফল প্রস্তুত করে পিএসসি।

পিএসসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে পিএসসির করার কিছু নেই। যদি পিএসসিতে নতুন প্রস্তাবিত পদ অনুমোদন হয়ে আসত, তাহলে সে অনুযায়ী ফল প্রস্তুত করা হতো। যেহেতু আমাদের কাছে ৪৪তম বিসিএসের পদ বাড়ানোর কোনো চিঠি আসেনি, তাই বিজ্ঞাপিত পদ ধরেই ফল প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও যাঁরা ক্যাডার পদে মনোনয়ন পাননি, তাঁদের বিধি অনুযায়ী নন-ক্যাডারের শূন্য পদ থাকা সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে সুপারিশের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সূত্র জানায়, এক হাজার ৭১০টি ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে আবেদন করেন প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার প্রার্থী। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ৭০৮ জন। এরপর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রায় চার হাজার প্রার্থী। তাঁদের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।

BBS cable ad