বিশেষ কারাগারে আইসোলেশনে চৌধুরী মামুন

গত বছর গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এ কারণে কারাগারে তিনি বিশেষ নিরাপত্তা পাবেন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর পাশের একটি বিশেষ কারাগারে একক সেলে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এতদিন তিনি কারাগারে বন্দি সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন। কিন্তু গতকাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার পর তাকে কারাগারের পৃথক সেলে রাখা হয়। নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় এখন থেকে তিনি একক সেলেই থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
কারা সূত্র জানিয়েছে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গতকাল আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে বিশেষ কারাগারে আলাদা কক্ষে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে চাইলেই অন্য কোনো বন্দি দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। তার নিরাপত্তার দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
যে কোনো অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সে সম্পর্কে গোপন তথ্যের অধিকারী কোনো ব্যক্তি ক্ষমা পাওয়ার শর্তে অপরাধের সমগ্র ঘটনা, মূল অপরাধী ও সহায়তাকারী হিসেবে জড়িত সকল অপরাধী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ঘটনা প্রকাশ করে বিজ্ঞ আদালতে যে সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী বলা হয়ে থাকে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ধারা এবং সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় এ সম্পর্কে বলা আছে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, রাজসাক্ষী হওযায় সাবেক আইজিপি মামুনকে আদালত সাধারণত ক্ষমা করে দিতে পারে অথবা তার শাস্তির মেয়াদ কমানো হতে পারে। এ ছাড়া তাকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। রাজসাক্ষীকে অনেক সময় নিরাপত্তা প্রদান করা হয়, কারণ তিনি অন্য আসামিদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে রাজসাক্ষীকে অন্যান্য কিছু আইনি সুবিধাও দেওয়া হতে পারে, যা বিচারক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারণ করেন। তবে রাজসাক্ষীর জবানবন্দি অবশ্যই সত্য হতে হবে এবং তা অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। যদি রাজসাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তবে তার এই সুবিধা বাতিল হয়ে যেতে পারে এবং তাকেও আসামির মতো বিচারের সম্মুখীন হতে হয়।
জানতে চাইলে ঢাকার নিম্ন আদালতের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আমিনুল গণি টিটো আমাদের সময়কে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে- কেউ যদি নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করে এবং সে অনুযায়ী আদালত সে সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওই মামলার অপর আসামিকে সাজা দিতে পারেন।
তিনি বলেন, ১৫ ধারায় এমন কোনো বক্তব্য নেই যে, ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে আদালত তাকে খালাস দেবেন। তবে নরমাল প্রাক্টিস, ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে আদালত তাকে খালাস দিয়ে থাকেন। আবার আদালত অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন। এটা পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার। কেউ রাজসাক্ষী ঘোষিত হয়ে সাক্ষ্য দিলে মামলার অপর আসামিরা তাকে জেরা করতে পারবেন। আর মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজসাক্ষীকে কারাগারে থাকতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, সেই অপরাধের সবকিছু তার (চৌধুরী মামুন) জানার কথা। সব তথ্য উদ্ঘাটনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালকে সহায়তার মাধ্যমে তিনি ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হতে চেয়েছেন। সেই প্রার্থনা ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করেছেন। তিনি এখন কারাগারেই থাকবেন। বক্তব্য গ্রহণের পর তার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অ্যাপ্রুভার হওয়ায় তার নিরাপত্তা-সংকট হতে পারে- এমন আশঙ্কায় তার আইনজীবী আবেদন জানিয়েছেন, মামুনকে যেন যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। সেই নিরাপত্তার ব্যাপারেও যথাযথ আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।