দুর্নীতির দায়ে এসপি নিহার রঞ্জনকে শাস্তি
অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত পুলিশ সুপার নিহার রঞ্জন হাওলাদারকে আগামী ১ বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে তার এই বেতন সমন্বয় করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে জননিরাপত্তা শাখার সিনিয়র সচিব আবদুল মোমেন স্বাক্ষর করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত পুলিশ সুপার নিহার রঞ্জন হাওলাদার ২০১৮ সালে ঢাকায় সিআইডিতে বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- ঐ বছর মার্চ মাসে পটুয়াখালীর জেলার মহিপুর থানার কুয়াকাটায় অবস্থিত বেদখলি জমি দখল করে দেওয়ার বিপরীতে তিনি রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি হোটেলে বসে অভিযোগকারীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ও ১০ শতাংশ জমি তাকে লিখে দেওয়ার দাবি করেন।
এ ঘটনার সাক্ষী অভিযোগকারী আব্দুর রহিম গং, তার বাসার গৃহশিক্ষক ও অভিযোগকারীর ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম।
পরবর্তী সময় ঐ বছর ২১ মার্চ ঢাকায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মালিবাগ শাখায় (হিসাব নম্বর-১৬১৩৯০১০১৪৩৯৩) তার অ্যাকাউন্টে বরগুনায় সোনালী ব্যাংকের কোর্ট বিল্ডিং শাখা থেকে অভিযোগকারীর তিন লাখ টাকা এবং পরবর্তীকালে ৪ এপ্রিল আবারো ঐ অ্যাকাউন্টে দুই লাখ টাকা প্রতারণামূলকভাবে গ্রহণ করেন।
এছাড়া ২২ মার্চ সন্ধ্যার দিকে কুয়াকাটার বনানী প্যালেস নামের একটি হোটেলে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানকে ডেকে নিয়ে অভিযোগকারীর পক্ষে বেদখলি জমি দখল করে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা ও ৪ এপ্রিল বরগুনা গিয়ে অভিযোগকারীসহ অন্যদের সঙ্গে এম আলী হোটেলে খাবার খাবার খাওয়ার অভিযোগে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর বিভাগীয় মামলা হয়। (মামলা নম্বর-০০৮/২০২৩)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু তিনি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর বিধি অনুযায়ী লিখিত বক্তব্য বা জবাব দাখিলের জন্য সময় বৃদ্ধিরও কোনো আবেদন করেননি, সেই অনুযায়ী চলতি বছর ১ এপ্রিল সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৭(২)(ঘ) বিধি মোতাবেক ঢাকা সিআইডির ডিআইজি কুসুম দেওয়ানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়।
এতে আরো বলা হয়েছে, যেহেতু তিন সদস্য বিশিষ্ট গঠিত তদন্ত বোর্ড সব বিধিবিধান প্রতিপালনপূর্বক সরেজমিন তদন্ত অন্তে গত ২৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ ৬১৯ নম্বর স্মারকমূলে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ বিধিমালার ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি অনুসারে যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘দুর্নীতি পরায়ণতা’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীকালে তাকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। আরো বলা হয়েছে, তিনি দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দাখিল করেন। সেহেতু নিহার রঞ্জন হাওলাদার পুলিশ সুপার, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ইতিপূর্বে বিশেষ পুলিশ সুপার, সিআইডি, ঢাকার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন এবং অন্যান্য দলিলপত্র পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণ ও দুর্নীতি পরায়ণতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর ৪(২)–এর উপবিধি (১) (ঘ) অনুযায়ী তাকে ‘আগামী এক বৎসরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’-এর দণ্ড প্রদান করা হলো এবং ভবিষ্যতে এ বেতন সমন্বয় করা হবে না।
জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।