কবজ উদ্দিন ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তার
গত ২৭/০৭/২০২৩ খ্রি. তারিখে শেরপুর সদর থানাধীন বলাইয়েরচর ইউনিয়নের অন্তর্গত রামেরচর সাকিনস্থ জনৈক জয়নাল আবেদীন এর জামিতে সকাল অনুমান ৬.৩৫ ঘটিকার সময় কবজ উদ্দিন (৪৫) কে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় শেরপুর সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করে সুরতহাল প্রস্তুত করে।
পরে ডিসিস্টের স্ত্রী বাদী হয়ে একই গ্রামের সরকার গোষ্ঠীর মোঃ শাহীন মিয়া সহ গং ২৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করিলে শেরপুর সদর থানার মামলা নং-৭২, তাং-২৭/০৭/২০২৩, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
মামলাটি রুজু হওয়ার পূর্বে হত্যাকাণ্ডে ঘটনার মূল রহস্য দ্রুত সময়ের মধ্যে উদঘাটন আসামী গ্রেপ্তার ও মামলার যথাযথ তদন্তের লক্ষ্যে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শেরপুর জেলার নবাগত পুলিশ সুপার জনাব মোনালিসা বেগম, পিপিএম-সেবা।
পুলিশ সুপার মহোদয় পিও পরিদর্শনকালে ভিকটিমের আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলেন, উক্ত ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্ত পূর্বক দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করার আশ্বাস প্রদান করে উপস্থিত জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
অত্র মামলাটি রুজু হওয়ার পর শেরপুর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের সনাক্তকরণসহ গ্রেফতারের জন্য তদন্তে নামে। তদন্ত চলাকালে ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বাদী পক্ষের লোকজনের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে যানা যায় যে, আকন্দ বাড়ি গোষ্ঠীর মিষ্টার মেম্বার সহ তার লোকজন সূত্রে বর্ণিত মামলার ঘটনা ঘটাইয়াছে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মিস্টার মেম্বার সহ তার ০২ ভাই ও তার শ্যালক সোহাগ এবং এবিএম মহিবুল্লাহ @মিস্টারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা জানায় যে সরকার বাড়ি গোষ্ঠীদের ফাসানোর জন্য তারা নিজেরাই সূত্র বর্ণিত মামলার ঘটনা ঘটাইয়াছে। আটককৃতদের মধ্যে হইতে ১। মোঃ মিজু আহম্মেদ (২২) ২। মোঃ জাহিদুল ইসলাম (১৯), উভয় পিতা- মৃত আঃ হক, বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
পরে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তদন্তকালে প্রকাশ পায়, রামের চর আকন্দ বাড়ী গোষ্ঠী (২নং ওয়ার্ড) মেম্বরা মিষ্টার মিয়ার ও সরকার গোষ্ঠীর মোঃ শাহীন মিয়া গংদের দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়া মামলা মোকদ্দমা সহ শত্রুতা চলিয়া আসিতেছিল। গত ইউপি নির্বাচন কালীন দুই গোষ্ঠীর মেম্বার প্রার্থী নিয়া দ্বন্দ চরম আকার ধারন করে। ঘটনার সূত্র ধরে কিছু দিন আগে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় আকন্দ বাড়ীর লোকজন রক্তাক্ত জখম হলে অত্র শেরপুর সদর থানায় সরকার বাড়ীর লোকজনদেরকে আসামী করে মামলা করে।
মামলায় সরকার বাড়ীর লোক দ্রুত জামিনে বেড়িয়ে আসলে আকন্দ বাড়ীর মিষ্টার মেম্বার সরকার বাড়ীর লোকদের শায়েস্তা করার জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করে। মিষ্টার মেম্বার তার ভাইদের সহ গোষ্ঠীর কয়েকজন মিলে নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীর জেঠাতো ভাই/ভিকটিম কবজ উদ্দিন (৪৫) কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার সূত্র ধরে গত ২৬/০৭/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা হতে ছন বাজারের পিছনে ১। মিষ্টার আলী মেম্বার (৩৮), পিতা- মৃত আব্দুল হক,২। মোঃ মিজু আহম্মেদ (২২) ৩। মোঃ জাহিদুল ইসলাম (১৯), উভয় পিতা- মৃত আঃ হক, ৪। মোঃ সোহাগ মিয়া, পিতা- মোঃ ফজু মিয়া, ৫। এবিএম মহিবুল্লাহ @ মিষ্টার, পিতা- সমির হক, সর্ব সাং- রামেরচর সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে সাথে নিয়ে রাতে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা রাত ১১.০০ ঘটিকার পর থেকে ছন বাজারের আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে। এবং ভিকটিমকে রাত্রী ১.০০ ঘটিকা পর্যন্ত বিভিন্ন কলাকৌশলে গল্পগুজব করে এলাকা নীরব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এলাকা নীরব হলে আকন্দ বাড়ির গোষ্ঠীর মিস্টার মেম্বার সহ অন্যান্য আসামীগন ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় অবস্থান করতে থাকে এবং ভিকটিম তার বাড়ীর রাস্তার দিকে রওনা দিলে পথিমধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী মিস্টার মেম্বার সহ অন্যান্য আসামীরা কবজ উদ্দিনকে হত্যা করিয়া ঘটনাস্থলে লাশ ফেলিয়া রাখে। সকাল বেলা মিস্টার মেম্বার নিজেই চিৎকার চেচামেচি করিয়া এলকার লোকজনদেরকে জানায় এবং থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার নাটক তৈরী করে বাদিনীকে ভুল বুঝিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ সরকার গোষ্ঠী শাহীন মিয়া গং সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।