বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো ডিএনসিসিতে চালু হলো স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো 'স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং' চালু করেছে ডিএনসিসি।
বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে ডিএনসিসির নগরভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ডিএনসিসি স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়।
যেখানে সেখানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে এবং নিরাপদ পার্কিং নিশ্চিত করতে পরীক্ষামূলকভাবে 'স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং' চালু করেছে ডিএনসিসি।
গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোর থেকে ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং নামে এই পার্কিং অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে গুলশান এলাকার আটটি বিভিন্ন সড়কে ২০২টি স্পটে স্মার্ট পার্কিং চালু করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে নগরভবনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, 'দুর্বার গতিতে আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি তার একটা কারণ হল ডিজিটালাইড হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন আর দুর্বার গতিতে আমরা এগিয়ে যাই। আমরা পদ্মাসেতু দেখলাম, টানেল দেখলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হবে, হয়েছে। তিনি বলেছেন মেট্রোরেল হবে, তাও হয়েছে। তিনি যা বলেন তা একে একে সুসম্পন্ন করে আমাদেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। আপনি ভোলার চরে যান, সেখানেও দেখবেন মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করছে। ডাক্তারের সেবার জন্য ফোন করছেন। পৃথিবীর সকল প্রান্তে মানুষ যোগাযোগ করছে। বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও আজ মোবাইল ও ইন্টারনেটের আওতায় আছেন ও বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। দুর্বার গতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তার একটি কারণ হলো আমরা ডিজিটাল।প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ ডিএনসিসিতে স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট সোসাইটি দরকার, স্মার্ট এডুকেশন দরকার, স্মার্ট গভার্ন্যান্স দরকার। সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হবে।'
ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, 'ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং চালু হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিএলডিপি (কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এর আওতায় মিয়ামি সিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। সকলের সহযোগিতায় এটি সফল হবে। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটির প্রতিটি এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে।'
মেয়র বলেন, 'দেশে এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা এগিয়ে চলেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন সেদিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অনলাইনে ট্যাক্স নিচ্ছে, যেখানে কোন ক্যাশে হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়া হয় না। আমরা অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স নিচ্ছি। আপনারা কেউ হোল্ডিং ট্যাক্স সশরীরে এসে দিবেন না, সবাই অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। কারন কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তা আছে যারা আপনাকে 'আকাশের যত তারা সিটি কর্পোরেশনে তত ধারা' এগুলো দেখিয়ে দিবে। তাই অনলাইন ওপেন করবেন আপনার ট্যাক্স আপনি দিয়ে দিবেন।
মেয়র আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে আমরা অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স চালু করে দিয়েছি। কোন অভিযোগ জানাতে আমরা সবার ঢাকা অ্যাপ চালু রেখেছি। যে কেউ যে কোন জায়গা থেকে অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারছেন এবং আমরা তা সমাধান করে দিচ্ছি। সবার ঢাকা অ্যাপে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে আমরা ৯৮ শতাংশ সমস্যার সমাধান ইতিমধ্যে করে দিয়েছি। এসব অনলাইন কার্যক্রমই হলো স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ। দুর্নীতিমুক্ত এবং জবাবদিহীতামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেই আমরা এরকম অনলাইন সিস্টেম চালু করেছি। অনলাইনে জনগণের কাছে সব আধুনিক সেবা পৌছে দিচ্ছি'
বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচির সমালোচনা করে মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। ঠিক তখনই দেশকে পেছনে নিতে চায় বিএনপি। আমি বলতে চাই, নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নেই। নৌকা সামনে এগিয়ে যাবে।'
ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, 'আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ এর পথে আছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ভিশন নিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই কিভাবে উন্নত সেবা জনগণের কাছে পৌছে দেয়া যায়। বিরোধী দল সহিংসতা করছে আর আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করছে। কিন্তু তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোপাগাণ্ডা মেশিনের মাধ্যমে তারা নানারকম প্রচারণা চালায়। বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে আমরা উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছি আর তারা ধ্বংস চালাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'ডিএনসিসির এই মডেলটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ঢাকা সিটিতে প্রচুর যানবাহন। এই শহরের ট্রাফিকের চিত্র পৃথিবীর অন্য কোন শহরের সাথে মিলে না। ঢাকায় এতো পরিমাণ গাড়ি যেটি ম্যানেজ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। গাড়ির তুলনায় রাস্তা কম। এমন শহরে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। স্মার্ট সলিউশন খুবই প্রয়োজন। স্মার্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সেটিও দ্রুতই শুরু হবে।'
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ডিএনসিসির স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তারা নিজেরা নিজেদের অর্থায়ন ও উদ্যোগে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটির সঙ্গে আমরা আছি। দেখা যায় নো পার্কিং বললেও আমরা কোথায় পার্কিং করতে হবে তা বলি না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কোথায় পার্কিং করা যাবে সেটি বলার সূযোগ হবে।স্মার্ট পার্কিংয়ের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধানের জন্য সামান্য খরচ ধরা হয়েছে। আসলে উন্নত দেশের মতো উন্নত ও মান সম্পন্ন সেবা পেতে এই সামান্য খরচ করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে। আমাদের তরফ থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে।'
বক্তৃতা শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র গুলশান-২ গোলচত্বরে ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং অ্যাপ ব্যবহার করে স্মার্ট পার্কিং এর উদ্বোধন করেন।
ডিএনসিসির তথ্য কর্মকর্তা মোঃ পিয়াল হাছানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, কাউন্সিলরবৃন্দ এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।