খায়রুজ্জামান লিটনের হাতেই থাকল রাজশাহী সিটি
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নৌকার প্রার্থী লিটন ১৫৫টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মুরশিদ আলম পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৩ ভোট।
এর আগে দুইবার রাজশাহীর নগর পিতা ছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন। ২০০৮ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র হন তিনি। রাজশাহী নগরীকে সাজানোর সুনিপন কারিগর, আধুনিক রাজশাহীর রূপকার খায়রুজ্জামান লিটন। তার হাত ধরে প্রতিনিয়তই বদলে যায় রাজশাহী মহানগরী। প্রশস্ত সড়ক, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নির্মল বায়ু, সবুজ আর ফুলে ফুলে সাজানো সড়ক বিভাজক, কারুকাজ, উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, দৃষ্টিনন্দন রাতের আলোকায়ন-এই নগরীকে করে তুলেছেন আকর্ষণীয়। ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে দেশসেরা শহরে পরিণত হয়েছে রাজশাহী মহানগরী। তাছাড়া যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রধান প্রধান সড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করেছেন। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে পূরণ করেন তার অন্যতম একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৫৯ সালে রাজশাহীর কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ১৯৭৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৯ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য হন।
খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম এবং ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (পবা-বোয়ালিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালের ৯ মে পর্যন্ত মেয়র ছিলেন। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট পুনরায় মেয়র নির্বাচন করে জয় লাভ করেন। বর্তমানে লিটন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
খায়রুজ্জামান লিটনের বাবার নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। তিনি দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে লিটন চতুর্থ এবং ভাইদের জ্যেষ্ঠ। তার দাদা আবদুল হামিদ রাজশাহী অঞ্চলে মুসলিম লীগের সভাপতি ও পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য (এমএলএ) ছিলেন।
এদিকে ১৫ এপ্রিল লিটনকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেন। বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এই সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম (হাতপাখা) নির্বাচন বর্জন করায় মেয়র পদে লড়েন ৩ জন।