ওয়াসার এমডির পদ হারালেন আ.লীগ সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ ফজলুল্লাহ
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহকে অপসারণ করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর পর অবশেষে এ পদ হারালেন তিনি। ওয়াসার নিয়মিত কাজ পরিচালনার সুবিধার্থে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এমডির দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক আনোয়ার পাশা।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ফজলুল্লাহকে অপসারণের বিষয়টি জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ধারা ২ ক এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ কে এম ফজলুল্লাহর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
নিয়োগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অধ্যাদেশের ২৮ ক অনুযায়ী স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালককে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে সাময়িকভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হলো। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিধি মোতাবেক দায়িত্ব ভাতা পাবেন। প্রজ্ঞাপন দুটির স্বাক্ষর করেন উপসচিব মোহাম্মদ আবদুর রহমান।
২০০০ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন এ কে এম ফজলুল্লাহ। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। এরপর আরো এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও এমডির পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিন বছরের জন্য এমডি পদে নিয়োগ পান। এমডি পদে থাকার সুবাদে প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগে স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়ান ফজলুল্লাহ।
ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এ কে এম ফজলুল্লাহর। তাদের নানাভাবে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর এ পদে ছিলেন তিনি। এছাড়া ওয়াসা বোর্ডও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।
ওয়াসার আলোচিত কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল্লাহ। তার আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তত ১০টি প্রকল্প নেয়া হয়। আটটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি বড় প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান। শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হয়েছে আট হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। চলমান দুই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে পাঁচ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। একের পর এক প্রকল্পেও কাটেনি নগরে পানির সংকট। প্রকল্পের সুফল নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বরাবর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়, তা জানতে চান হাইকোর্ট। আদালতের ঐ পদক্ষেপের পর ওয়াসা ভবনের একটি কক্ষে রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কম্পিউটার, গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়। ঐ সময় এমডির দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।