South east bank ad

পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকান্ডের প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

 প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন   |   র‍্যাব

পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকান্ডের প্রধান আসামিকে  গ্রেফতার করেছে র‌্যাব
বহুল আলোচিত ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রিপন নাথ ঘোষ’কে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

গত ২২ ফেব্রæয়ারি ২০১৩ তারিখ রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলনী এলাকা হতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্নসহ অজ্ঞাত এক যুবককে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে জানা যায় যে, মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য এবং তার নাম কনস্টেবল বাদল মিয়া। উক্ত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ০১টি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-৩২ তারিখ ২২ ফেব্রæয়ারি ২০১৩। উক্ত মামলার তদন্ত শেষে গত ০৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখ গ্রেফতারকৃত রিপনকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট ০৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশীট দাখিল করেন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে রিপন নাথ ঘোষসহ মোট ০৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। ফলশ্রæতিতে, র‌্যাব বর্ণিত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল টাংগাইলের মির্জাপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ সদস্য বাদল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রিপন নাথ ঘোষ (৪০), পিতাঃ নারিয়ণ নাথ ঘোষ, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল’কে গ্রেফতার করে। এসময় তার নিকট হতে উদ্ধার করা হয় মাদকসহ বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত ৯টি মোবাইল সিম।

গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১২ সালে ০৯ নভেম্বর মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী তার খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। এর কিছুদিন পর একটি মাদক বিরোধী অভিযানে রিপন নাথ ও তার ০১ সহযোগি মাদকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়, যেখানে কনস্টেবল বাদল আভিযানিক দলের সদস্য ছিল এবং ০২ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে তারা জানতে পারে যে, মাদক বিরোধী অভিযানে অংশ নেয়া কনস্টেবল বাদল মতিঝিল এলাকায় বসবাস করছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পিছনে পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে তারা সন্দেহ করে। নির্বিঘেœ মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য রিপন তার সহযোগিদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত রিপন বিভিন্ন সময়ে রেন্ট-এ-কারের প্রাইভেটকার চালানোর সুবাধে তার বিভিন্ন রেন্ট-এ-কারের সাথে যোগাযোগ ছিল। কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রেফতারকৃত রিপন গত ২১ ফেব্রæয়ারি ২০১৩ তারিখ রাতে রেন্ট-এ-কার থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে নিজে গাড়ী চালিয়ে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া বাকী সদস্যদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলের কর্মস্থল শাহবাগ গোলচত্ত¡র এলাকায় যায়। বিশ^জিৎ ও কনস্টেবল বাদল একই এলাকায় বসবাস করায় পূর্ব পরিচিত বিধায় কনস্টেবল বাদলকে কৌশলে ডেকে আনার জন্য বিশ^জিৎকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ^জিৎ কনস্টেবল বাদলকে ডেকে এনে কৌশলে প্রাইভেটকারে উঠায়। তারা কনস্টেবল বাদলকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে এবং তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তারা রাজধানীর মতিঝিল কালভার্ড সংলগ্ন নির্জন এলাকায় এসে রিপন নাথ ও তার অন্যান্য সহযোগিরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে কনস্টেবল বাদলকে হত্যা করে। পরবর্তীতে গুম করার উদ্দেশ্যে রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলনী এলাকায় প্রাইভেটকার থেকে কনস্টেবল বাদলের লাশ ফেলে দিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে তারা পলায়ন করে।

কনস্টেবল বাদল এভাবেই দায়িত্ব পালনকালে একটি মাদক বিরোধী অভিযানে অংশ নেয়ার কারণে মাদক চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জীবন দিয়েছে। কনস্টেবল বাদল এর মত এমন অনেক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত দেশ বিনির্মাণে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় অনেক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গুরুতর জখম অথবা অঙ্গ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ সকল অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সদস্যদের আত্মত্যাগ দেশবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

গ্রেফতারকৃত রিপন মতিঝিল এলাকার চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। সে কনস্টেবল বাদল হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হলে উক্ত মামলার বিচারকার্য চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাংগাইলে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করত এবং কিছুদিন পর পর বাসা পরিবর্তন করত বলে জানা যায়। কখনো সে স্থায়ীভাবে এক জায়গায় বসবাস করত না এবং মাঝে মধ্যে গোপনে পরিবারের সাথে দেখা করতো। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে দিনের বেলা টাঙ্গাইল-রংপুর রুটে বিভিন্ন বাসের হেলপারের কাজ করতো। এছাড়াও সে ঐ এলাকায় বাসের হেলপারির আড়ালে রাতের বেলা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। আত্মগোপনে থেকে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য সে বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত মোবাইল সীম ব্যবহার করত। সে ২০১৩ সালের পূর্বেও বেশ কয়েকবার মাদক মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে। সর্বশেষ আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় টাংগাইলের মির্জাপুর হতে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
BBS cable ad

র‍্যাব এর আরও খবর: