অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদেরও, বিল পাস
গ্রেপ্তার প্রশ্নে ছাড়ের আওতায় এলেন স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। এমন বিধান রেখে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল–২০২৩’ পাস হয়েছে।
এর ফলে এখন থেকে স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। এত দিন গ্রেপ্তার প্রশ্নে এই ছাড় পেয়ে আসছিলেন শুধু সরকারি কর্মচারীরা।
একই সঙ্গে সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল–২০২৩’ এ কর্মচারীদের বেতন–ভাতা, অবসর সুবিধা সরকারি চাকরি আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
এদিকে সংসদে এই বিল পাসের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে এর সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় সদস্যরা। তারা বলছেন, এই বিল আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এই নীতির পরিপন্থি। একাধিক বিধান সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই আইনের একাধিক বিধান সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই আইন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ফৌজদারী মামলায় অভিযোগ গঠনের আগে যে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়। এজন্য কারও থেকে অনুমতি নেয়া লাগে না। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের আগে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এটা আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এই নীতির পরিপন্থি।
জনপ্রশাসনে আজ চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে মন্তব্য করে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, তারা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মানেন না। প্রজাতন্ত্রের কিছু কিছু কর্মচারী নিজেকে স্বঘোষিত মার্শাল আইয়ুব খান বা তার অনুসারী ভাবেন। তাদের ইচ্ছেমত স্বাধীন ও জনস্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
মন্ত্রীর স্বাক্ষর থাকার পরেও কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব ঠিকমতো কাজ করেন না, গুরুত্ব দেন না অভিযোগ করে তিনি বলেন, জেলা ও উপেজলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কোথাও গেলে তাদের গাড়ির বহর দেখে মনে হয় সরকারের কোনো উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী সেখানে গেছেন। বেশিরভাগ দপ্তরের জনপ্রতিনিধিদের প্রাপ্য সম্মান দিতে ইতস্তত বোধ করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রী মহোদয়দেরও অসহায় দেখা যায়। তাদের (মন্ত্রী) ইচ্ছা বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেও গড়িমসি করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করে জনপ্রশাসন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তাদের হেফাজত করবে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এতে জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভিত্তি দুর্বল হবে, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে।
মোকাব্বির খান বলেন, কীভাবে কিছু কিছু আমলাদের কাছে আমাদের সংসদ সদস্যরা হেয় প্রতিপন্ন হন। এটার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিলে জনপ্রতিনিধি ও জনগণ সম্মানিত হবে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ৩৫, ৪০, ৫৫ এমনকি ৫৯ বছর পর্যন্ত চাকরির বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে আছে। বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হলে বেকার সমস্যা লাঘব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।