South east bank ad

দেশে সংস্কারের জোয়ার উঠেছে

 প্রকাশ: ১২ অগাস্ট ২০২৪, ০১:১৬ অপরাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

দেশে সংস্কারের জোয়ার উঠেছে

নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত একদিনের সূচনা হয়েছে। দেশে সংস্কারের জোয়ার উঠেছে মানুষের মাঝে। বড়-ছোট, নারী-পুরুষ, সব শ্রেণির মানুষ চায় দেশকে নতুন দিনের আলোয় আলোকিত করতে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশের প্রয়োজনে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই নতুন দিনের শুরু। আন্দোলনে সম্মুখ সমরের যোদ্ধা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র তাহাজিবুল মুরসালিন আলিফের সঙ্গে কথা হলো।

তিনি বলেন, আন্দোলনের শুরুর সময় থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টারের মিড এক্সাম চলছিল। ঠিক সেই সময় থেকে আমি আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমরা হার মানিনি। সবার কাছে আমার অনুরোধ রইল এখনই সময় সুন্দর ও বৈষম্যহীন বাংলা গড়ার।

৫ আগস্ট ছিল মানুষের বাঁধভাঙা আনন্দ, লাখে লাখে মানুষ যোগ দিয়েছে আনন্দ মিছিলে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মিছিলে যুক্ত হয়েছে। এর সঙ্গে আমরা কিছু অপ্রীতিকর ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনাও দেখতে পেয়েছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়ে গেল প্রতিরোধ ও সংস্কার। যেমন ভাবে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঠিক তেমন ভাবেই আবার ছাত্রসমাজ ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশ সংস্কারের কাজে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, দেয়ালে স্লোগান মুছে নানা রকম আন্দোলনের গ্রাফিটি, শহিদদের শোক জানানো, নানা দাবি-দাওয়া ইত্যাদি নিয়ে নেমে পড়েছে রাস্তায়।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাকলাইন মুশতাক বলেন, আমি ৭ আগস্ট থেকে রাস্তায় ট্রাফিকের কাজে যুক্ত হই। বিভিন্ন কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা এই কাজে রাস্তায় নেমে এসেছে। সবাই নিজ নিজ এলাকার রাস্তায় নিয়োজিত ছিল। আমি খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনের রাস্তা ও খিলগাঁও চৌরাস্তায় কাজ করেছি। আমরা প্রথমে লেন ভাগ করে দিয়েছি। একদিক দিয়ে দ্রুত গতির যানবাহন চলবে আর একদিক দিয়ে রিকশা, সাইকেল ইত্যাদি। আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি ছিল যাতে কোনো যানবাহন ওভার্টেক না করে। আমরা জনসাধারণের অনেক সহায়তা পেয়েছি। অনেকে আমাদের খাবার দিয়ে সহায়তা করেছে। আমাদের খুবই অ্যাপ্রিসিয়েট করেছে।

একই সঙ্গে সারা দেশে চলেছে গ্রাফিটি। আন্দোলনের সময় দেয়াল লোয় স্লোগান লিখা হয়েছিল খুবই তাড়াহুড়ো করে এবং লুকিয়ে লুকিয়ে। যা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন ছিল না। শুধু প্রয়োজনের স্বার্থে লেখা। এখন এগুলো সংস্কার প্রয়োজন। ছাত্ররা তাই করল। খিলগাঁওয়ের দেয়ালগুলো রঙের প্রলেপ দিয়ে মুছে দিতে লাগল। তারা এবার দেয়ালগুলোয় সুন্দর করে আবার প্রতিবাদী ও অনুপ্রেরণার গ্রাফিটি শুরু করল।

ন্যাশনাল আইডিয়ালের নবম শ্রেণির ছাত্রী নুর-ই তাবাসসুম আকতার চৈতীর কাছে জানা গেল তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, আমি ৮ তারিখ থেকে গ্রাফিটির কাজে যোগ দেই। খিলগাঁও পল্লিমা সংসদের দেয়াল ও সামনের গেটের দিকে আমি কাজ করেছি। আমরা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মিলে গ্রাফিটি করেছি। আমরা এর সঙ্গে রাস্তায় ময়লা পরিষ্কার ও ঝাড়ু দেওয়ার কাজও করেছি। তালতলা মার্কেটের সামনে আমি পরিষ্কারের কাজে ছিলাম। আমার সঙ্গে আমার মা ছিলেন। তিনি প্রতিদিন আমার সঙ্গে এসে বসে থাকতেন আর আমি কাজ করতাম। এলাকার অনেক মানুষ আমাদের সহায়তা করেছে। কেউ জিনিসপত্র কিনে দিয়েছে। কেউ আমাদের নাশতা খাইয়েছে। সবাই মিলেই আসলে কাজ হচ্ছে।

৮ আগস্ট রাতে হঠাৎ এক বন্ধু আশরাফুজ্জামান রিংকু ফোন দিল তিলপাপাড়ায় একটি মন্দির আছে সেখানে কেউ হুমকি দিয়েছে। সেখানে পাহারা দরকার। ততক্ষণাৎ চলে যেতে হলো সেখানে। সেখানকার এক বন্ধু সুমনকে নিয়ে মন্দিরে গিয়ে দেখলাম আগে থেকেই মন্দিরের কিছু সনাতন ধর্মে ছাত্র এসেছে এবং তিলপাপাড়ার কিছু ছাত্র এসে বসে আছে। তারা সারা রাত থাকবে। তিলপাপাড়ার স্থানীয় বন্ধু সুমনের নেতৃত্বে একটি বিশাল দল গঠন করা হলো। আরেক বন্ধু জানাল, কেউ রটিয়েছে এই মন্দিরে হামলা হবে। যেহেতু সারা দেশেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে বা হচ্ছে তাই আমরা কোনো রিস্ক নিতে চাই না। এলাকায় এ ধরনের তৎপরতা হতে দেব না আমরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেমন মন্দির পাহারায় আছে সব শ্রেণির মানুষ। আমরাও তাই করব।

এদিকে আমাদের খিলগাঁও ‘সি’ ব্লকে বসেছে টহল বাহিনী। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত আতঙ্কে সবাই অস্থির। তাই আমরাও প্রস্তুত হয়ে গেলাম। আন্দোলনের শুরু থেকে যুক্ত ছিল খিলগাঁও এলাকাবাসী ও মুগদা ইসলামী ইউনিভার্সিটির ছাত্র রাহাত। তিনি বললেন, এই ডাকাত আতঙ্কে এলাকার মানুষ কেউ ঘুমাতে পারছে না। আমরাও কেউ ঘুমাতে পারছি না। তা হলে বাসায় বসে থেকে লাভ কি? নেমে গেলাম রাস্তায়। প্রায় এক-দেড়শ ছেলেমেয়ে রাস্তায় টহল দিয়েছে। সঙ্গে বড় ভাইদের কেউ কেউ ছিলেন। বন্ধুরাও ছিল। সবাই মিলে এলাকায় খুব আস্তে আস্তে বাইক নিয়ে টহল দিলাম যাতে কারও ঘুমের অসুবিধা না হয়। আমরা এ, বি, সি, ডি এই রকম অনেক গ্রুপ করে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকার বিভিন্ন স্পটে বসেছিল কেউ কেউ আবার বাইক নিয়ে টহল দিয়েছে কেউ কেউ।

খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শোক প্রকাশের জন্য একমত হলো ছাত্ররা। স্কুলে শহিদ মিনারে আয়োজন হলো। ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় সব ছাত্র-ছাত্রী-জনতা ভিড় করতে লাগল স্কুল প্রাঙ্গণে। একইরকম আয়োজন করেছিল শহিদ বাকী স্মৃতি পাঠাগারের পাঠচক্র। পল্লিমা সংসদ প্রাঙ্গণে এর আয়োজন হয়। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শেখ বারেয়া বিনতে সাঈদ বলেন, শহিদদের স্মরণ করা এবং তাদের শ্রদ্ধা জানানো আমাদের দায়িত্ব।

সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আশরাফ আহমেদ আলী বলেন, দেশ গঠনের কাজে যেহেতু নেমেছি সেহেতু কোনো কিছুই আমরা বাদ দেব না। আমরা জানি কিছু জিনিস পরিবর্তন করা অনেক কঠিন। কিন্তু অনেক কঠিন কাজ যেহেতু আমরা করতে পেরেছি বাকিগুলোও আমরা করে ফেলব। আজকে ১১ আগস্ট আমরা রাস্তায় ময়লা না ফেলা ও চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দিয়ে চাঁদা না প্রদান করার জন্য লিফলেট প্রদান কর্মসূচি করছি। সবাইকে আহ্বান করছি কাউকে চাঁদা না দিতে। কেউ চাঁদা চাইলে ছাত্রসমাজকে জানানোর আহ্বান করছি।

এখনও চলছে সংস্কারের কাজ। সারা দেশে অব্যাহত থাকবে এই সংস্কার। দেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে একটু একটু করে। তরুণদের হাতে যখন দেশের দায়িত্ব তখন জয়ী আমরা হবই। এটা একটা সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের স্রোতে আন্দোলিত হোক দেশ, অব্যাহত থাকুক চিরকাল।

BBS cable ad