South east bank ad

স্বাগত ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

 প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন   |   দেশ

স্বাগত ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ। তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক\ যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক\’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ’ কবিতার এ মর্ম আহ্বান কেবল কবির একার নয়, এটা কোটি বাঙালির অনুভূতি। ৪৫০ বছরের বেশি যার বয়স। সে বয়সে আজ যোগ হলো আরো একটি বছর। ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে নতুন সূর্যোদয়ের নববর্ষ ১৪৩০-কে স্বাগত জানাল বাঙালি ও বাংলাভাষী দেশী-বিদেশী মানুষ।

পহেলা বৈশাখ মানে পুরনো বছরের দুঃখ, বিষাদকে ভুলে নতুনকে বরণ, বৈশাখ মানে নবান্ন উৎসব ও হালখাতা, বৈশাখ মানে হাজার বছরের অপরূপ গ্রামবাংলার ছেলেবুড়ো, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মিলনমেলা। অবশ্য হাল আমলে এ সংস্কৃতিতে এসেছে বেশ পরিবর্তন, যুক্ত হয়েছে নানা অনুষঙ্গ। পহেলা বৈশাখ এখন মিশে গেছে মাটির শানকিতে পান্তা-ইলিশের আয়োজনে, রাজধানীর রমনা বটমূলের মিলনমেলা কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রায়।

প্রতি বছরের মতো এবারো রাজধানী ও সারা দেশে বাঙালির সর্বজনীন এ লোকোৎসবকে সাজানো হয়েছে বর্ষবরণের নানা আয়োজনে। জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে। বাংলা নববর্ষের তাত্পর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

একসময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। হিজরি চান্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে ইংরেজি ১৫৫৬ সালের ১০ মার্চ বাংলা সন গণনা শুরু হয়।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রাম-গঞ্জ-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠান আজও পালিত হয়।

মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এ উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

এদিকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বিকাল ৪টার মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘রমনা বটমূলে ছায়ানটের সংগীতের মাধ্যমে দিনটির বরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে। ডিএমপি প্রতি বছর রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রসরোবর ও ঢাকার যেসব স্থানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়, সেসব স্থানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এবারের পহেলা বৈশাখ যেন ঢাকাবাসীসহ সব বাঙালি উৎসবমুখরভাবে পালন করতে পারে, সেজন্য ডিএমপি সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

নগরবাসীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘নগরবাসী নিরাপত্তার মধ্যে থেকেই আনন্দ উৎসব করতে পারবেন। ব্যাগ নিয়ে কেউ রমনা পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রত্যেকের চেকইন করা হবে। তাই বাড়তি কোনো কিছু নিয়ে রমনায় আসবেন না। রমনায় লোকসমাগম বেশি হলে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রমনা পার্ক সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ৪টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করে রমনা ত্যাগ করতে হবে। ৪টার পর আর কাউকে রমনায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।’

BBS cable ad