South east bank ad

মে দিবস আজ

 প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন   |   দেশ

মে দিবস আজ

আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিনটি মে দিবস হিসেবেও বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় ও সংগ্রামের প্রতীক এ দিবস। বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়। সে ধারাবাহিকতায় আজ বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এবার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে।’ এ স্লোগানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার আহ্বান জানিয়েছে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে গত ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে। ২১ এপ্রিল এ কমিশন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর তাদের সুপারিশমালা পেশ করেছে। কমিশন শ্রমজীবী মানুষ, মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করেছে। বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এছাড়া অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিল, আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস, স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি এবং নিরাপত্তা জোরদার হবে।

মে দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠন দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

১৮৮৬ সালের এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে বহু শ্রমিক জীবন দেন। সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েনের ভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত স্লোগান ছিল ‘৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিনোদন ৮ আট ঘণ্টা বিশ্রাম।’ সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়েছিল শিকাগোতে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক সমবেত হন। সে সময় শিকাগো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প-কারখানা ও ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর কেন্দ্র। আন্দোলনে বাধা দিলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদর মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়, একজন মারা যায় ও অনেকে আহত হয়। পুলিশি নিপীড়নের প্রতিবাদে শ্রমিক নেতারা শিকাগোর বিখ্যাত হে মার্কেট স্কয়ারে কর্মসূচির ডাক দেন।

এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন। ওই বিস্ফোরণের ফলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সাতজন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং ৬৭ জন কর্মকর্তা আহত হন। চারজন বিক্ষোভকারী নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হন। এ ঘটনা পরে পরিচিতি পায় হে মার্কেট ম্যাসাকার হিসেবে। পরবর্তী সময়ে আটজন নৈরাজ্যবাদী খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং দোষ প্রমাণের আগেই তাদের অনেককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ আন্দোলন স্মরণে ১৮৮৯ সালে ২০ দেশের সমাজকর্মী, শ্রমিক নেতা ও ট্রেড ইউনিয়নের এক আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে ১ মে ‘শ্রমিক দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিশ্বজুড়ে এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারিত হয়, শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ খুলে যায়। তৈরি হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন ধারা, যা ধীরে ধীরে শ্রেণী-বৈষম্য হ্রাসে ভূমিকা রাখে। সেই আত্মত্যাগ আজও বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণা হয়ে আছে। শ্রেণী-বৈষম্য পুরোপুরি দূর না হলেও মে দিবসের সেই আত্মত্যাগ নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার লড়াইকে বেগবান করেছে।

BBS cable ad