কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান
বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, বিইউপি, এনএসডব্লিউসি, এফএডব্লিউসি, পিএসসি। এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অবসর গ্রহণের পর ২০২১ সালের ১২ জুন তিনি বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাঁকে ৩ বছরের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তিনি ১৬তম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাতের স্থলাভিষিক্ত হন।
শেখ আব্দুল হান্নান ১ আগস্ট ১৯৬৩ তারিখে বাগেরহাট জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ আজহারুল ইসলাম এবং নাজলী ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে জেনারেল ডিউটিজ পাইলট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সর্বোচ্চ ফ্লাইং ক্যাটাগরি ‘এ’ এবং প্রফিসিয়েন্সি উইংধারী এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান একজন কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর।
তিনি এমআই-১৭/১৭১ এর ‘হেলিকপ্টার পরীক্ষক বোর্ড’-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক বাহিনীর সুদীর্ঘ চাকরিজীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, মিরপুর থেকে এয়ার স্টাফ কোর্স, ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান থেকে এয়ার ওয়ার কোর্স, ২০১৪ সালে পাকিস্তান থেকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ওয়ার কোর্স এবং ২০১৭ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিরপুর থেকে ক্যাপস্টন কোর্স সম্পন্ন করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমডিএস এবং পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৩ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদ থেকে ‘টপ গ্র্যাজুয়েট’ সম্মাননাসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বিমান বাহিনীর একাধিক অপারেশনাল ফ্লাইং স্কোয়াড্রন ও বিভিন্ন ঘাঁটির উইং অধিনায়ক হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিকাল সেন্টারের কমান্ড্যান্ট হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ আব্দুল হান্নান অত্যন্ত সুনামের সাথে বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের এয়ার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ঘাঁটি দুটির ব্যাপক উন্নয়নের স্বাক্ষর রাখেন। বিমান বাহিনী ছাড়াও তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, মিরপুর-এ ডাইরেক্টিং স্টাফ, সিনিয়র ইনস্ট্র্রাক্টর (এয়ার) এবং ডেপুটি কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সামরিক প্রশিক্ষণে মূল্যবান অবদান রাখেন।
এছাড়াও তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিরপুর-এ সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ (এয়ার) হিসেবে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। অপারেশন ও সমরকৌশলে অনুরাগী এই এয়ার চিফ মার্শাল ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে বিভিন্ন অপারেশনাল ও স্ট্র্যাটেজিক এক্সারসাইজের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ‘হিস্ট্রি অব এয়ার পাওয়ার’-এর ওপর এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সারসংক্ষেপ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনুমোদিত রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দক্ষ সংগঠক, নিষ্ঠাবান গবেষক এবং যোগ্য নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন এই এয়ার চিফ মার্শাল কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় তিনি ১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় মিলিটারি অবজারভার হিসেবে, ২০০৩-২০০৪ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ব্যানএয়ার কন্টিনজেন্টে এবং ২০০৬-২০০৭ সালে একই দেশে বিমান বাহিনী কন্টিনজেন্টের কমান্ডার হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত জীবনে কর্মদক্ষতা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘বিমান উৎকর্ষ পদক’-এ ভূষিত করা হয়।
ভ্রমণপিপাসু এই এয়ার চিফ মার্শালের শখের তালিকায় রয়েছে বই পড়া ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পরিদর্শন। ব্যক্তিগত ও পেশাগত কারণে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। উল্লেখযোগ্য দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, কাতার, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ইত্যাদি।