South east bank ad

তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ’ এখন উন্নয়নের রোল মডেল

 প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২, ০৩:২৩ অপরাহ্ন   |   দেশ

তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ’ এখন উন্নয়নের রোল মডেল
বিডিএফএন লাইভ.কম

জাতির জনক ছিলেন রাজনীতির কবি। মাত্র ১৮ মিনিটে তার মুখ নিঃসৃত বাণী জাগিয়েছিল দেশকে। মঞ্চে উচ্চারিত রাজনীতির কবির প্রতিটি নির্দেশ জাতির মুক্তির জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৮ মিনিটের অলিখিত ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই  ভাষণ থেকেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনন্ত প্রেরণা পায় দেশবাসী।

তখন থেকেই স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রামের মন্ত্র উদ্বেলিত করেছিল জনগণকে। একাত্তরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। 

আজ শনিবার (২৬ মার্চ) ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল লাল সবুজের বাংলাদেশের।

স্বাধীনতার পর থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে, স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা রোখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে প্রগতির পথে। এ দেশে ক্ষুধায়, দুর্যোগে মানুষ আর্তনাদ করে না, নেই সেই আগের গগনবিদারী হাহাকার। ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট ছিল। 

আজ তা পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি  টাকায়। ১২৯ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ ডলার হয়েছে। মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখে আজ বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্ববাসীও গর্ব করে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি,  প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ বেড়েছে।  

‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ হিসেবে যারা অতীতে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারাও এখন থ বনে গেছে। দারিদ্র্য ও দুর্যোগ জয় করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের দিকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। নানা অর্জনে ভরা ঝুড়ি নিয়ে এ বছর জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ ঢাকাসহ সারাদেশে প্রত্যুষে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। 

এই দিবসে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকের সজ্জায় সজ্জিত হবে। প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সাজানো হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাজাবেন বাদ্য।

এদিকে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে এবং প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি- স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হলেও ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ ভূখণ্ডে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। 

দিনে দিনে পাকিস্তানিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শেখ মুজিব যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালিদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে অটল থেকেছিলেন। তার অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ, যে সংগঠন দু’টির সৃষ্টি থেকে শুরু করে তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কর্মসূচি নিয়েছে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।কোস্ট গার্ডের জাহাজগুলো আজ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর চালিয়েছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তারের আগমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার দলিলটির লিপিবদ্ধ অংশে বলা হয়েছে, ‘ইহাই হয়ত আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
BBS cable ad