South east bank ad

৭ বছর কারাদণ্ড হতে পারে নুসরাতের

 প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০২ অপরাহ্ন   |   দেশ

৭ বছর কারাদণ্ড হতে পারে নুসরাতের
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের জন্য একটি কঠোর আইন করা হয়েছে। আইনটির শিরোনাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০। ২০২১ সালে এই আইনটি সর্বশেষ সংশোধনী করা হয়। এই আইনে নারী এবং শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। কিন্তু এই আইনটি প্রণীত হবার পর থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কতিপয় ব্যক্তি আইনটির অপব্যবহার করছেন, মিথ্যা মামলা করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল অবলম্বন করছে। আর এ কারণেই এরকম মিথ্যা এবং অবিবেচক সুলভ মামলা যেন না হয় সেটি প্রতিরোধ করার জন্য এই আইনের ১৭ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়ের করা হলে তার শাস্তির বিধান করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ অনুযায়ী এ ধরনের মিথ্যা মামলা করলে ৭ বছর পর্যন্ত দণ্ড হতে পারে। আজ ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে এরকম একটি হত্যা ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হলেন নুসরাত। তিনি মুনিয়ার বোন। আর এই মামলাটি যদি শেষ পর্যন্ত তিনি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে মিথ্যা মামলা দেয়ার অভিযোগে তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, এ বছরের ১৯শে এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন মুনিয়া। এই আত্মহত্যার পরপরই নুসরাত গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তিন মাস তদন্তের পর পুলিশ ১৯শে জুলাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলে আত্মহত্যার প্ররোচনার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। একই সাথে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় যে, মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। এর বিরুদ্ধে একটি নারাজি দরখাস্ত দেন ওই মামলার বাদী নুসরাত। কিন্তু আদালত ওই নারাজি আবেদন নাকচ করে দেন এবং পুলিশের যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সেটি গ্রহণ করেন। এর ফলে মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে যে মামলাটি নুসরাত দাখিল করেছিলেন সেই মামলাটি নাকচ হয়ে যায় এবং শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নুসরাতকে একটি মহল প্ররোচিত করছে এবং অন্য উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে আবার নতুন একটি মামলা দায়ের করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তারই ফলশ্রুতিতে আজ সোমবার ঢাকার ৮ নম্বর নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নুসরাত বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন এবং হত্যা ধর্ষণের মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হল যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১), ৯(২) এবং ৯(২)-এ ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে। ৯(১)-এ বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তিকে ধর্ষণ করা হয়, ধর্ষণের পর যদি ওই নারী জীবিত থাকেন তাহলে ৯(১) ধারা প্রযোজ্য হবে। ৯(২)-এ বলা হয়েছে, ধর্ষণ করে হত্যা করা হলে ৯(২) প্রদান করা হবে। আর ৯(৩) হল গ্যাং-রেপ, যেখানে সম্মিলিতভাবে কাউকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

মুনিয়া মারা গেছেন হাজার ১৯শে এপ্রিল আর তার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গেছে যে, তিনি আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছেন। কাজেই, এতদিন পর এই ধর্ষণের মামলা দায়ের করাটাই উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। কারণ, ধর্ষণের ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে যখন ধর্ষণ হয়েছে তার পরপরই মামলাটি করতে হবে। আইন অনুযায়ী ধর্ষণ হল কারো অসম্মতিতে জোর করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। সেটি এতদিন না করে এখন এ মামলাটি দায়ের করাটাই একটি উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা। দ্বিতীয়ত, হত্যা মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যখন আত্মহত্যা প্রমাণিত হয়েছে তখন এটিকে ধর্ষণ বলার উদ্দেশ্য কি সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখন ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এই মামলাটিকে পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পিবিআই নিশ্চয়ই তদন্ত করবে এবং সত্য অনুসন্ধান করবে কিন্তু মামলার ভারে ন্যুজ হয়ে থাকা নিম্ন আদালতে আরেকটি নতুন মামলা করা হয়েছে যে মামলাটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো মিডিয়াতে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা, কিছু ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা। কাজেই এই মামলাটির শেষ পরিণতি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার মতোই হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। সেক্ষেত্রে নুসরাতকে হয়তো মিথ্যা মামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে এবং সেটি যদি হয় তাহলে ১৭ ধারা অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

মুনিয়ার ভাইয়ের মামলা কেন ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে?

আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবার পর মুনিয়ার বোন নুসরাত তানিয়া গতকাল সোমবার নতুন একটি উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল সোমবার ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীন বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলা আমলে নেয়ায় আইনের গুরুতর ব্যত্যয় ঘটেছে বলে আইনজ্ঞরা মনে করছেন। মুনিয়ার মৃত্যুর পর গতকালের মামলার পর মোট ৩টি মামলা দায়ের হলো। মুনিয়ার আত্মহত্যার পর প্রথম মামলাটি দায়ের করেছিলেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত তানিয়া। এটি ছিলো আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা। এরপর মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ মুনিয়ার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবী করে সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঐ হত্যা মামলায় প্রধান আসামী করা হয় চট্টগ্রামের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল করিম শারুন চৌধুরীকে। মামলার অভিযোগে বলা হয় ‘শারুন তার লোকজনকে দিয়ে গুলশানের ফ্লাটে গিয়ে মুনিয়াকে হত্যা করে।’ মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়েছিল যে ‘শারুন মুনিয়ার সংগে প্রেমের অভিনয় করে। মুনিয়া যখন তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় তখনই শারুন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে পেশাদার খুনি দিয়ে কৌশলে মুনিয়াকে হত্যা করে।’

যেহেতু সে সময়, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলাটি তদন্তাধীন ছিলো, তাই এই মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। গত ১৯ জুলাই মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান করে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট এবং অন্যান্য আলামত বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, ‘আত্মহত্যার কোন প্ররোচনা হয়নি।’ পুলিশের এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মুনিয়ার বোন নুসরাত তানিয়া নারাজি দরখাস্ত দেয়। আদালত এব্যাপারে নথিপত্র বিশ্লেষণ করে, নারাজি আবেদনটি নাকচ করে দেয়। ফলে, ১৮ আগস্টই আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই, এরপর মুনিয়ার ভাইয়ের মামলাটি তদন্ত হবার কথা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটি তদন্ত না করেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নুসরাত একটি হত্যা ও ধর্ষণের মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে এই মামলা অগ্রহণযোগ্য এবং বে আইনি। মুনিয়ার ঘটনা নিয়ে তার ভাই আশিকুর রহমান সবুজের একটি হত্যা মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী একটি হত্যা অভিযোগে একটিই মামলা হতে পারে, একাধিক নয়। তাই সবুজের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মুনিয়ার হত্যাকাণ্ড বিষয়ে আর কোন মামলা আদালত নিতে পারে না। প্রশ্ন উঠেছে, মুনিয়ার ভাইয়ের মামলা কেন ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে? ঐ মামলা থাকা অবস্থায় আইন লঙ্ঘন করে কিভাবে আরেকটি মামলা হয়?
BBS cable ad