South east bank ad

দৈনিক ইন্তেকাল’ সত্যি নয়, নাটক

 প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২২, ০২:৫৮ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

দৈনিক ইন্তেকাল’ সত্যি নয়, নাটক
বিডিএফএন লাইভ.কম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই দিন ধরে ভাইরাল হওয়া ‘দৈনিক ইন্তেকাল’ নামের একটি আইডি কার্ড নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কার্ডটিতে আবুল মিয়া নামের নিচে বাংলায় ছোট করে লেখা আছে সাংবাদিক। বাঁয়ে একটি স্বাক্ষরসহ কর্তৃপক্ষ লেখা। তারও নিচে বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লাল রঙে লেখা প্রেস। কার্ডটিতে যে ব্যক্তির ছবি রয়েছে তার নাম মো. সাদ্দাম মাল। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সামসুর হক মালের ছেলে তিনি।

না, আসলে তিনি কোনো সাংবাদিক নন আর এই নামে কোনো পত্রিকাও নেই। মূলত ফেসবুক ও ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল ‘কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়া’র কনটেন্ট তৈরি করতে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এই চ্যানেলের প্রধান চরিত্রে অভিনয়কারীই হলেন এই সাদ্দাম। মূলত তার চ্যানেলে প্রচারের জন্য কনটেন্ট তৈরির একটি অংশ ছিল ছবিসহ এই কার্ডটি। ‘দৈনিক ইন্তেকাল’ নামের একটি নাটকের শুটিং চলাকালে কেউ একজন এ কার্ডটির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার পরই এটি ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ছবির পোস্টের নিচে অনেকে মজা করে মন্তব্য করলেও অনেকে করেছেন সমালোচনা।

প্রথম আলোর পটুয়ালাখীর কলাপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি নেছার উদ্দিন আহমেদ টিপু বলেন, ‘সাংবাদিকতাকে এভাবে তুলে ধরা কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন এসে গেছে। সাংবাদিকতা পেশায় শুধু যে খারাপ হচ্ছে, তা নয়। সব পেশায়ই ভালো-মন্দ দেখা যায়। দৈনিক ইন্তেকাল নামকরণটাও সংবাদপত্রশিল্পকে কটাক্ষ করার ইঙ্গিত বহন করে।’

যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার বিলাস দাস বলেন, ‘তাদের নাটক বেশি প্রচারের জন্যই পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকতা পেশাকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। একদল লোক সব সময় মিডিয়ার পেছনে লেগেই থাকে। এটা তারই একটি অংশ হতে পারে।

‘পত্রিকার যে নাম ব্যবহার করা হয়েছে, বাস্তবে এটার বিরুদ্ধে সিনিয়র সাংবাদিকদের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ফেসবুকে সস্তায় জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায় এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ নাম ব্যবহার করা হয়েছে।’

তবে কুয়াকাটা মাল্টিমিডিয়ার লেখক ও পরিচালক শুভ হোসাইন কবির বলেন, ‘এটা আসলে আমাদের নাটকের একটা সিকোয়েন্স। এটা ভাইরাল করার কোনো প্ল্যান আমাদের ছিল না। যাদের হলুদ সাংবাদিক বলা হয়, মূলত যাদের কোনো অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট নেই। এর পরও বিভিন্নভাবে টাকা-পয়সা বা বিভিন্ন লবিং বা বড়ভাইয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকের একটা কার্ড পায়। ‘সেই কার্ড দিয়ে যেহেতু সে অশিক্ষিত, তাই বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করে, মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে হুমকি দিয়ে টাকা নেয়ার একটা ধান্ধা। এ রকম একটা চরিত্রে আবুল মিয়া নামের একজনকে দেখানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নাটকে যারা ভালো সাংবাদিক তাদের চরিত্রও দেখানো হয়। শেষমেশ সে তার আচার-আচরণের জন্য পুলিশের কাছে ধরা পড়ে এবং একপর্যায়ে বলে যে সে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য। পরে প্রেস ক্লাবের সভাপতিও সেখানে উপস্থিত হন এবং জানা যায় যে, আসলে আবুল মিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য নন। তখন সভাপতি নিজেও পুলিশের কাছে আবুলকে তুলে দিতে বলেন। পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।’
কবির বলেন, ‘আবুলের আইডি কার্ডটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আমাদের ফেসবুক পেজে বক্তব্য তুলে ধরেছি। ইচ্ছা করলে আপনি সেখান থেকেও আমাদের বক্তব্য নিতে পারেন।’

হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে কেন কনটেন্ট করতে গেলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে শুভ বলেন, ‘আমাদের ইউটিউব চ্যানেল দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমরা সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। হলুদ সাংবাদিকতাও সমাজের জন্য একটা ঝুঁকি। এটা মূলধারার সাংবাদিকতাকে কলুষিত করছে। প্রকৃত সাংবাদিকতাকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’ সাবস্ক্রাইব বাড়ানোর জন্য সাংবাদিকতা পেশাকে অসম্মান করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে শুভ বলেন, ‘ভালো সাংবাদিকের চরিত্র আমাদের নাটকে তুলে ধরছি। দেখলেই বুঝতে পারবেন।’

হলুদ সাংবাদিকতা সম্পর্কে ধারণা নেই জানিয়ে এ ইউটিউবার বলেন, ‘আমি যতদূর জানি বা শুনেছি সাংবাদিক হতে হলে সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণি পাস দরকার। একদম যদি ক্যামেরাম্যানও হতে হয় তাহলেও তার অন্তত অষ্টম শ্রেশি পাস দরকার। ‘যারা অশিক্ষিত কিছু করতে পারে না, তারা একটা কার্ড নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়িয়ে নিজেকে জাহির করে অপসাংবাদিকতা করে। মূলত অপসাংবাদিকতাই হলো হলুদ সাংবাদিক।’

শুভ বলেন, ‘দেখেন আইনে কী আছে সেটা আমার দেখা হয়নি। আমি যেটা জেনেছি সেটা বলেছি। আমি মূলত এটার পরিচালক। আমার লেখক আছেন। আপনি চাইলে তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

দৈনিক ইন্তেকাল নাটকের লেখক এবং প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা আবুল মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকতা পেশাকে সমাজের আয়না হিসেবে দেখি। যারা সমাজের সংগতি, অসংগতিগুলো মানুষের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। ‘কিন্তু কিছু লোক আছে যাদের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতাই নেই, তারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করে বেড়ায়। এটা সমাজের জন্য ঝুঁকি। আমার নাটকে সেই বিষয়টিই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেখানে আমরা দুটি চরিত্র তুলে ধরেছি। একটা হলো একজন ভালো সাংবাদিকের চরিত্র কেমন হয়, আরেকটি হলো একজন অপসাংবাদিকের চরিত্র কেমন হয়।’

ভাইরাল হওয়া ছবির মধ্যে পুলিশের পোশাক পরা দুজন ব্যক্তিকে স্যান্ডেল পরা অবস্থায় দেখা গেলেও আবুল মিয়া জানান, আসলে নাটকে ওই দৃশ্য দেখা যাবে না।

অনুমতি না নিয়ে পুলিশের পোশাক ব্যবহার করার বিষয়ে আবুল মিয়া বলেন, ‘দেখেন ওগুলো হলো ছায়া পোশাক। তা ছাড়া লাখ লাখ ইউটিউবার এ রকম পোশাক ব্যবহার করছে।’

এ বিষয়ে মহীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘এটা আমার জানা ছিল না। তারা কীভাবে পুলিশের পোশাক ব্যবহার করছে, সেটা খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।’
BBS cable ad