পঞ্চগড়ে ধর্ষণ মামলায় এসআই কারাগারে

মোঃ লিহাজ উদ্দিন, (পঞ্চগড়):
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে এক বিধবা নারীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় আব্দুল জলিল (৪৫) নামের এক পুলিশের উপ-পরিদর্শককে (এসআই) কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
গতকাল রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে আব্দুল জলিল জামিন আবেদন করলে ট্রাইবুন্যালের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আব্দুল জলিল কুড়িগ্রাম সদর থানায় কর্মরত আছেন। তিনি গাইবান্ধা সদর উপজেলার উত্তর ফুলিয়া এলাকার শুকুর আলীর ছেলে। ইতোপূর্বে তিনি পঞ্চগড় সদর থানায় কর্মরত ছিলেন।
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করে আদালত। পরে উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পান আব্দুল জলিল। উচ্চ আদালতের অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রোববার পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন আবাদুল জলিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবি এ্যাড. মেহেদী হাসান মিলন। মামলার উদৃতি দিয়ে তিনি জানান, আব্দুল জলিল পঞ্চগড় সদর থানায় কর্মরত থাকাকালীন বাদীনির দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরীর তদন্ত করতে যান।
সেখানে গিয়েই ওই নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে বিয়ের নাটক সাজিয়ে আব্দুল জলিল অসংখ্যবার ধর্ষণ করেন ওই নারী বাদীকে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগি ওই নারী তার মৃত স্বামীর ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেড়ে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। আব্দুল জলিল সেটির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
সেই সুবাদে ভুক্তভোগি নারীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ ছিলো তার। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবও দেন। এক পর্যায়ে একই বছরের গত ৬ অক্টোবর রাতে বাদীনির ঘরে ঢুকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেন পুলিশ সদস্য জলিল।
সেখানে ধরাও পরেন তিনি। পরে আব্দুল জলিল ওই নারীকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এসময় তার পরিচিত দুজনকে ডেকে এনে মিথ্যা বিয়ের নাটকও সাজান।
ভুক্তভোগি ওই নারী বলেন, পঞ্চগড়ে কর্মরত থাকাকালীন আব্দুল জলিল আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেও বিয়ের কাগজ দেখাতে কালক্ষেপন করছিলো। নানা অযুহাত দেখিয়ে একসময় বদলি নেন।
তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ৭ অক্টোবর পঞ্চগড় আদালতে স্বাক্ষী দিতে আসবেন এবং সেদিনই আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাবেন। ৭ তারিখে আসেনও এবং আমার বাড়িতেই রাতযাপন করেন।
কিন্তু পরদিন আদালতে স্বাক্ষী দিয়ে আর আমার সঙ্গে দেখা করেননি। ফোনে যোগাযোগ করলে মিথ্যা বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে বিভিন্ন রকম হুমকি দেন। বাধ্য হয়েই মামলা দায়ের করছেন বলেও জানান ওই নারী।
আইনজীবি মেহেদী হাসান মিলন বলেন, ন্যায় বিচার পেতে ভুক্তভোগী নারী আদালতে এসেছে। আদালত মামলা আমলে নিয়ে অভিযুক্ত এসআই আব্দুল জলিলকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলো।
আজকে জামিন না মঞ্জুর করে এসআইকে কাগাগারে পাঠিয়েছে। আমরা আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। ইনশাআল্লাহ ভুক্তভোগি নারী ন্যায় বিচার পাবেন।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার জানান, এসআই আব্দুল জলিল বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। তবে তার মামলার বিষয়ে অবগত নন তিনি।