South east bank ad

ঝালকাঠি পৌর এলাকায় নেই কোন উন্নয়নের ছোয়া

 প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ

ঝালকাঠি পৌর এলাকায় নেই কোন উন্নয়নের ছোয়া
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :

ঝালকাঠি পৌর এলাকার পশ্চিম ঝালকাঠি খ্যাত ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডে দীর্ঘ দিনেও লাগেনি উন্নয়নের ছোয়া। স্থানীয় কয়েক হাজার বাসিন্দা, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শত শত শিক্ষার্থী এবং দূরদূরান্ত থেকে যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

৫ম চীন মৈত্রি সেতু ঝালকাঠির গাবখান ব্রিজের পূর্বঢালের থেকে অতুল মাঝির খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ২কিলোমিটার পথে খানা খন্দকে ভর্তি। এলাকাবাসীসহ জেলার রাজাপুর ও কাঠালিয়া থেকে আগত জেলা সদরে সেবা প্রত্যাশীদের প্রবেশে সহজতর পথ কিফাইতনগর সড়ক। সংস্কারের অভাবে সড়কটির বিটুমিন ও খোয়া উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কিন্তু এসড়কটি দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না হওয়ায় যাতায়াতকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এখন প্রায় মৃত সড়কে পরিণত হয়েছে। যার কারণে ওই সড়কে রিক্সা ও ভ্যান চালিয়ে জিবীকা নির্বাহকারীরা পড়ছে চরম বিপাকে। একদিকে দীর্ঘদিনের করোনার ছোবল অপরদিকে রাস্তা খারাপের কারণে যাত্রী না থাকায় চরম অমানবিক জীবনযাপন করতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। 

ঝালকাঠি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়ের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বাসন্ডা খালের ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে খালের পাড়ের চার শতাধিক পরিবার। হুমকিতে আছে তিনটি লবণ উৎপাদনের কারখানা, দুটি মসজিদ ও পাকা স্থাপনা। পাশাপাশি খালের পাড় ভেঙে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে বসতবাড়িতে।
ঝালকাঠি পৌরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডকে মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বাসন্ডা খাল। পৌর কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, একসময় ৬ ও ৭ নম্বর দুটি ওয়ার্ড সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ’৯০–এর দশকে ওয়ার্ড দুটি পৌরসভায় যুক্ত হয়। তবে দুই দশকেও এ দুটি ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন লাগেনি।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের একমাত্র পাকা সড়কটি বেহাল। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন সদরের গাবখান, শেখেরহাট, সারেঙ্গল, রাজাপুর, কাঁঠালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতুল মাঝির খেয়া পার হয়ে জেলা শহরে সহজেই প্রবেশ করে। অতুল মাঝির খেয়াঘাটটিও দীর্ঘদিনে সংস্কার করা হয়নি। এটি বাসন্ডা খালে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কই কাঁচা। বর্ষাকালে এ ওয়ার্ডের মানুষের চলাচলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। মীরবহর বাড়ি থেকে বারেক ফকিরের বাড়ি হয়ে পুরাতন ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারের পাকা সড়কের নির্মাণকাজ ফেলে রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ঋষিবাড়ি থেকে তালুকদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশের সড়কও বেহাল। এ ওয়ার্ডে পাকা নালা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।

এদিকে বাসন্ডা খালের ভাঙনের ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর বটতলা থেকে  নেছারাবাদ মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেছারবাদ, যুব উন্নয়ন ও রামনগর এলাকার বাসিন্দাদের শহরের বের হওয়ার একমাত্র পথ এটি। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফোরকান সিকদার বলেন, বাসন্ডা খালের ভাঙন রোধ করতে না পারলে তাঁদের বসতভিটা বিলীন হয়ে যাবে। বাসন্ডা সেতু থেকে আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত টেকসই বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে ভাঙন  ঠেকানো সম্ভব। 

এই ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা ডেইরি খামারি মানিক মিয়া বলেন, ‘জোয়ারের পানি ঢুকে আমাদের বসতভিটাসহ চলাচলের পথ তলিয়ে যায়। মূল শহরের বাসিন্দাদের মতো আমরাও পৌরকর দিই। তার পরেও আমরা দৃশ্যমান উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।’

বাসন্ডা খালের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে কিস্তাকাঠি আবাসন পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশে বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে কয়েকটি প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘দাতা সংস্থা এত বড় প্রকল্পে অর্থ দিতে নারাজ। তবে পানি উন্নয়ন বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রকল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

আবু হানিফ আরও বলেন, উপশহর প্রকল্পে বরাদ্দ না থাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে কিফাইত নগর পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কসহ অন্যান্য সড়কের নির্মাণকাজ থেমে আছে। আগামী ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হতে পারে।

পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, গত পাঁচ বছরে পৌরসভার মূল শহরের সাতটি ওয়ার্ডের সড়ক, কালভার্ট ও নালা পাকা করাসহ সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। ভবিষ্যতে পৌরসভায় প্রায় ২শ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হবে। এই মেয়াদে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন্ডা খালের বাঁধ দেওয়াসহ সব অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে।
BBS cable ad