এবার বাবা আসছে'ই কিন্তু কফিনে!

এইচ কবীর টিটো, (গফরগাঁও) :
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার যশোরা ইউনিয়নের কোষ্ষাপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের (৫৮)বড় ছেলে তামজিরুল ইসলাম(৩০) ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করে । অভাবী বাবা ছেলের পড়ালেখার চিন্তা বাদ দিয়ে ঋণ নিয়ে আর জমি বন্ধক রেখে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বাবা দুলাল উদ্দিন ছেলেকে সৌদী আরবের জিদান শহরে পাঠায়। সৌদীর জিদান বিমান বন্দরে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে ২০১৭ সালে যোগদান করে। মা-বাবা স্বপ্ন দেখতে থাকেন-ছেলে বিদেশে গিয়ে বেশি বেশি উপার্জন করবে, টাকা পাঠাবে, সেই টাকায় ঋণ শোধ হবে, তিনবেলা ভালো খেতে পারবে, ঘরবাড়ি ঠিকঠাক হবে—আরো কত কী! আগামী বছর ২০২২ সালে দেশে ফিরে আসার কথা ছিলো তামজিরুলের।
বিদেশ যাওয়ার সময় ৫ বছরের ছোট্ট ছেলে আবিদকে বলে যান, আসার সময় তোমার জন্য নতুন কাপড় নতুন খেলনা নিয়ে আসবো।শিশু পুত্র আবিদ অপেক্ষায় আছে কখন আসবে বাবা। আসছেন তামজিরুল , কিন্তু একি!
সদ্য স্বপ্ন দেখা ছেলেটির নিথর দেহ পড়ে আছে সৌদী আরবের জিদান শহরে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের মত বিমান বন্দরে কাজে যান তামজিরুল ইসলাম। তাকে বলা হয় পতাকা ষ্ট্যান্ডের উঁচুতে পতাকা এবং লাইট সেটিং এর জন্য।কথামত তামজিরুল কোমড়ের সেফটি বেল্ট বেঁধে উঁচুতে উঠে যান।কে জানতো এটাই তার শেষ উঠা।হঠাৎ সেফটি বেল্ট ছিড়ে পড়ে যান নিচে।ঘটনাস্থলে তামজিরুল মারা যান।শেষ হয় একটি স্বপ্ন দেখা সুন্দর সকালের।কথা রাখতে পারেননি ছোট শিশু পুত্র আবিদের। ফোনে বলেছিলেন, তোমার জন্য জামা কাপড় খেলনা কিনে রেখেছি বাবা।
তামজিরুলের বাবা - মা ছেলে হারানোর শোকে প্রায় পাগলের মত। এমনি ভাবে ভাগ্যের ও দেশের চাকা সচল করতে কত তামজিরুলের মত অনেক পরিবারের স্বপ্ন ভাঙ্গার গোপন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ও জীবনাবসান ঘটছে প্রতিনিয়তই তা কেউ জানেনা।আবিদ জানেনা তাঁর বাবা নেই।আসবেনা কোনদিন।সে শুনেছে তার বাবা আসছে,তবে কফিনে।