South east bank ad

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে গিয়ে উদ্দ্যোক্তাই এখন বেকার

 প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৪৬ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে গিয়ে উদ্দ্যোক্তাই এখন বেকার
আব্দুর রহমান, (নেত্রকোণা) : 

আইসিটি বিষয়ে কোন রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজ প্রচেষ্টায় আইসিটির উপর দক্ষতা অর্জন করে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফল এক উদ্দ্যোক্তার নাম খান আতাউর রহমান রাজীব। জন্ম ১৯৮১ সালে নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার দেওগাও গোবিন্দপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। তার বাবা পেশায় একজন শিক্ষক আর মা আদর্শ গৃহিনী। নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করে ৫ম শ্রেণীতে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে মোহনগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করে পরবর্তীতে নিজ গ্রামের দেওগাও গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে সবশেষে ঢাকা কলেজ হতে বিএসসি অনার্স ডিগ্রী অর্জন করে। ভবঘুরে এই মেধাবী ছাত্র এমবিএ অধ্যয়নরত অবস্থায়ই ঔষধ কোম্পানীতে চাকুরী নেয়।চাকুরী চলাকালীন সময়ে মারাত্মক মোটরবাইক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসে সে চলে আসে নিজ ভূমি নেত্রকোণায়।

নেত্রকোণায় এসে নতুন কর্মসংস্থানের চেষ্টায় ২০০৭ সালে নেত্রকোণা কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ হতে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিএম শাখায় এইচএসসি পাশ করে। শিক্ষক পরিবারের মেধাবী এই সন্তান কোনদিন সরকারী চাকুরীর চেষ্টা না করে তার দাদুর নিকট থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে একটি ল্যাপটপ কিনে বিনামূল্যে সহপাঠীদের কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে বেসিক ধারণা প্রদানের কার্যক্রম চালাতে থাকে।

দূঃসহ জীবন চলার পথেই তিনি ২০১৪ সালে জয়েন ষ্টক কোম্পানী থেকে সনদ নিয়ে গড়ে তোলেন নেত্রকোণা আইসিটি লিমিটেড (এনআইসিটি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান শুরুর গোড়া থেকেই বেকারদের আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে অদম্য এই উদ্দ্যোক্তা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নেত্রকোণায় শতশত বেকার যুব-যুবাদের প্রশিক্ষিত করে কর্মের ব্যবস্থা করে দেন।

তিনি সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও নিজ অর্থায়নে কম্পিউটার বিষয়ে নানা পর্যায়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। প্রশিক্ষিতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ। ইতিমধ্যে তিনি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়েও যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেন। নেত্রকোণা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মাণাধীন শেখ কামাল হাইটেক পার্কের বিপরীতেই কাটলীস্থ রঞ্জনভিলায় রয়েছে নেত্রকোণা আইসিটি লিমিটেডের মানসম্মত অস্থায়ী কার্যালয়। যেখানে রয়েছে অত্যাধুনিক মানের ১ টি কম্পিউটার ল্যাব, রয়েছে ৬০ টি কম্পিউটারসহ আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং এ প্রশিক্ষিত করার নেটওয়ার্কিং সুবিধাদি। কিন্তু বর্তমানে নেত্রকোণা আইসিটি লিমিটেড নামের স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা।

গত বছর কোভিড ১৯ মহামারীকালে মানবিক এই উদ্দ্যোক্তা কর্মহীন ও অসহায়দের মাঝে ৫ লক্ষাধিক টাকার প্রণোদনা প্রদান করেন ব্যক্তিগতভাবে। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারী নির্দেশ মেনে তিনি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও তিনি ৪ মাস স্টাফদের বেতনাদি প্রদান করেন। কিন্তু এক সময় করোনার ভয়াল থাবায় অফিসের কার্যক্রম চালু করতে না পারায় তিনি নিজেই সহায় সম্বলহীন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন।

এ অবস্থায় তিনি সরকারী সহযোগীতা পেতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে ব্যর্থ হয়ে ঘরমুখো হয়ে পড়েন। ২০২০ সালে জেলা প্রশাসকের বাছাইকৃত ক্ষুদ্র উদ্দ্যোক্তাদের তালিকায় সেরা ১০ এর মধ্যে নেত্রকোণা আইসিটি লিমিটেডের নাম থাকলেও তিনি বিফল হন প্রণোদনার ঋণ বা কোন ধরনের সরকারী বেসরকারী সহযোগীতা পেতে। যেকারণে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের ভাড়া বাবদ ৫ লক্ষাধিক টাকা তিনি আর পরিশোধ করতে পারেননি।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে কম্পিউটারসহ আসবাবপত্র। সবশেষে তিনি জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আব্দুর রহমানের শরণাপন্ন হলে জেলা প্রশাসক প্রতিষ্ঠানটি স্ব-শরীরে পরিদর্শন করেন এবং আশস্থ করেন, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত নেত্রকোণা আইসিটি লিমিটেডের বিষয়টি আমি সরকারে নজরে এনে সহযোগীতার উদ্দ্যোগ নিব। 

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান খান আতাউর রহমান রাজীব বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারছিনা, কম্পিউটারগুলো অকেজো হয়ে গেছে। দুটো কম্পিউটার দিয়ে বাসায় বসে কোন রকমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আমার এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গিয়েছেন, এরমধ্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি'র সাবেক এমডি হোসনে আরা বেগম এনডিসি একজন। সবশেষ জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আব্দুর রহমান মহোদয়ও প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে গেছেন। আমি কত বেকার যুব যুবাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি আর আজ নিজেই বেকার হয়ে গেলাম। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র সুদৃষ্টি কামনা করছি, আপনি জাতির জনকের কন্যা, আপনার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় আইসিটি বিশেষজ্ঞ। আপনি অনুগ্রহ করে প্রশাসনের মাধ্যমে আমার ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বাস্তব চিত্রের তথ্য জেনে সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত করে নব উদ্দ্যোমে আমাকে কাজ করার সুযোগ দিবেন।
BBS cable ad