South east bank ad

মেয়র-সচিবের দুর্নীতি ও বিএনপি নেতার অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু

 প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ

মেয়র-সচিবের দুর্নীতি ও বিএনপি নেতার অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :

ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের অনিয়ম, কাজ না করে বিল উত্তোলন, নিম্নমানের কাজ, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।

জানাগেছে, দরপত্রের কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান। আবার সেই ঠিকাদার হচ্ছেন বিএনপি নেতা। তাকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত মেয়র। কারন ওই বিএনপি নেতা তাঁর বড় ছেলের মামা শ্বশুর। আর এ কাজে সহযোগিতা করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে মেয়র, সচিব ও উপ সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। শুধু বিএনপি নেতাকে কাজ পাইয়ে দেওয়াই নয়, ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য  মঙ্গলবার সরেজমিন নলছিটি পৌরসভায় যান ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক মো. কামাল হোসেন।

নলছিটি পৌরসভার সূর্য্যপাশা গ্রামের বাসিন্দা ছাইদুর রহমানের স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে দাখিলকৃত অভিযোগে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ খান। গত ১০ মার্চ শপথ নেন মেয়র ও কাউন্সিলররা। মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর পৌরসভার কয়েকটি কাজ পাইয়ে দেন মেসার্স খন্দকার ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্ত¡াধকারী হলেন পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও মেয়রের বড় ছেলে রাসেলের মামা শ্বশুর পারভেজ খন্দকার। এমনকি পৌরসভার একটি উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার আগেই ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ লাখ টাকার বিল দিয়ে দেওয়া হয়। এ টাকা থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে পৌরসভার ডেকোরেশন ও পেইন্টিংয়ের কাজ দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন মেয়র ও সচিব।

এদিকে গত ৮ এপ্রিল ডেঙ্গু ও মসক নিধনের জন্য একটি খাতে দুই লাখ ৮৮ হাজার ৪০০ ও অপর একটি খাতে এক লাখ চার হাজার ২৮ টাকার কোন কাজ না করেই ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়ও ইজিপি দরপত্র ম্যানুয়ালে করার মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খান, সচিব এএইচএম রাশেদ ইকবাল ও উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েমের বিরুদ্ধে। পৌরসভার সচিব ও উপ সহকারী প্রকৌশলী নিয়মিত অফিস করেন না। মাসে ৮-১০ দিন অফিস করেন তাঁরা। পৌরসভার নামে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখার হিসাবের চেকে অগ্রীম স্বাক্ষর করে থাকেন সচিব এএইচএম রাশেদ ইকবাল। গত ২৬ জুলাই সোনালী ব্যাংকে সচিবের স্বাক্ষর করা একটি চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দুই কর্মচারী আটক হয় পুলিশের হাতে। ওই চেকে মেয়রের সই জাল করা হয়েছিল।

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঠিক বিচার চেয়ে নলছিটি পৌরসভার সূর্য্যপাশা গ্রামের ছাইদুর রহমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণায়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পৌর শাখা-২ এর উপ সচিব ফারজানা মান্নান গত ২ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্তের জন্য পাঠান।

এ ব্যাপারে পৌরসভার উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম বলেন, পৌরসভার কোন বিল ভাউচারে বা চেকে আমি স্বাক্ষর করি না। আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ মনগড়া।

নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আবদুল ওয়াহেদ খান বলেন, একটি মহল নামে বেনামে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করছে এবং আমার সুনাম নস্ট করার চেস্টা করছে ।

তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় অভিযোগ তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে পৌরসভায় সরেজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
BBS cable ad