টাঙ্গাইলে বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের নানা উদ্যোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলে বন বিভাগ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্ঠির লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে । কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে টেকসই বন ও জীবিকা সুফল প্রকল্প, বৃক্ষরোপন,বন্যপ্রানীর খাবারের ব্যবস্থা ।
টাঙ্গাইল বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মধুপুর বন এলাকায় মুখপোড়া হনুমান, লালমুখ বানর, মায়া হরিণ, শজারু, বুনো শুকর, মেছো বাঘ, বনবিড়াল, খরগোসসহ ১৯০ প্রজাতির প্রাণি রয়েছ। এদের মধ্যে ২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, মেঘ হু, মাছরাঙা, খয়ড়া গোছা পেঁচা, বুতুম ঁেপচা, নিম পেঁচা, পানকৌরি, সাদা বগ, রাতকানা বগ, চিল, কাঠঠোকরা, মায়া ঘুঘু, হুদহুদ, সবুজ সুইচোরা, বনমোরগসহ ১৪০ প্রজাতির পাখি ও গুই সাপ, অজগর, তক্ষক, বেজী, ঘুখরোসহ ২৯ প্রজাতির সরিসৃপ, ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির উভয়চর প্রাণীও রয়েছে।
প্রায় একশ বছর পূর্বে মধুপুর বনে হাতি, বাঘ, চিতা ও ময়ূরের মত প্রাণীর বিচরণ ছিল। তথ্য বলছে, ১৮৬৮ থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত মধুপুর গড় থেকে ৪১৩টি হাতি শিকার করা হয়। ১৯৮৮ সালে ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে ভাগ হয়ে টাঙ্গাইল বনবিভাগের সাথে মধুপুরকে যোগ করার পর ওই সময়ে পশু ও বন্যপ্রাণীর খাবার উপভোগী গাছ চুরি করার কারণে কমতে থাকে। এতে করে বনের ভেতরে থাকা পশু পাখী ও সরীসৃপ প্রাণী কমতে থাকে।
বন সংরক্ষনে বন উজার রোধ ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন ও পশুখাদ্য উপযোগী করার জন্য ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২৯৫ হেক্টর জমিতে ঔষধিগাছসহ পশুপাখির খাদ্য উপযোগি ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
এর মধ্যে আললকি, হরতকি, বহো, বগডুমুর, কটবেল, মহুয়া, অর্জন, ডুমুর, বন আলী, আমড়া, বন আম বেওয়া, চাপালিশ, জলপাই, শিমুল, বট, বুতুম, গান্দি গজারী ডায়না উল্লেখ্যযোগ্য।
২০১৮-১৯ সালে জাতীয় উদ্যানে ২০০ হেক্টর ও দোখলা রেঞ্জ এলাকায় ১০০ হেক্টর জমিতে তিন লাখ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা হয়। ২০১৯-২০ সালে জাতীয় উদ্যানে ১৯০ হেক্টর, দোখলা রেঞ্জে১৩০ হেক্টর ও মধুপুর রেঞ্জের ৫ হেক্টর জমিতে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা হয়। ২০২০-২১ সালে ধলাপাড়া রেঞ্জে ৭০ হেক্টর, হতেয়া রেঞ্জে ২৩৫ হেক্টর, বহেড়াতলী রেঞ্জে ১০৫ হেক্টর, জাতীয় উদ্যানে ১০৫ হেক্টর, দোখলা রেঞ্জে ১৫০ হেক্টর, মধুপুর রেঞ্জে ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মোট ১১ লাখ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
প্রতিটি বাগান রক্ষণাবেক্ষনের জন্য ১৮ সদস্য বিশিষ্ট ফরেস্ট পোটেকশন এন্ড কনজারভেশন কমিটি (এফপিসিসি) করা হয়েছে। এ ছাড়াও ফরেস্ট কনভারসেশন ভিলেজ কমিটি (এফসিবি) রয়েছে। অপরদিকে ৭০০ কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কারকে (সিএফডব্লিউ) ৫ শতাংশ সুধে ৫০ হাজার করে টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এদের প্রত্যেককে মাসে ১২ শ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।
শ্রমিক সর্দার মো. সোলায়মান উদ্দিন বলেন, আমার নেতৃত্বে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। আমাদের বেকারত্ব দূরের পাশাপাশি আমার সংসার ভালোই চলছে। আমরা ছাড়াও করোনায় যারা কর্মহীন ছিলো তারাও এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছে।
কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কার আনিসুর রহমান বলেন, ২০০৩ সালের পর বেশ কিছু গাছ কাটা হয়েছিল । তারপর থেকে বন্যপ্রাণী খাবারের সংকট দেখা দেওয় । এরা খাবারের জন্য লোকালয়ে বাহির হয়ে আনারস বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা শুরু করে। তখন স্থানীয় লোকজন বন্যপ্রাণীদের মারা শুরু করে। এভাবে বন্যপ্রাণী কমতে থাকে।
দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। বন্যপ্রাণীল খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য শাল বাগানের ভিতরে ফাঁকে ফাঁকে ফল জাতীয় বৃক্ষ রোপন করছি। এ বৃক্ষ গুলোর ফল বন্যপ্রাণীর খাবার হবে।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বনকর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল বাড়ানো জন্য যে সব গাছের ফল খায় ওইসব গাছকে গুরত্ব দিয়ে সুফল প্রকল্পের আওতায় ১১ লাখ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। যেভাবে গাছ গুলো বেড়ে উঠতে তাতে আগামী তিন চার বছরের মধ্যে রেজাল্ট পাওয়া শুরু করবো। তখন দেখা যাবে বন্য প্রাণী তার আবাসস্থল ফিরে পাবে। এতে বন্য প্রাণী বনের ভিতরেই থাকবে। তখন লোকলয়ে গিয়ে বন্যপ্রাণী সাধারণ মানুষকে কোন সমস্যা ও ক্ষতি করবে না। ঠিক মানুষও তখন বন্যপ্রাণীর কোন ক্ষতি করবে না।