মৌলভীবাজারে বেপরোয়া উঠতি বয়সী বাইকাররা
তানভীর আঞ্জুম আরিফ (মৌলভীবাজার) :
ছেলের আবদার লাখতেই বাবা-মারা নতুন ব্র্যান্ডের দামি মোটর সাইকেল কিনে দিচ্ছেন। এতে বেকার ওই সব যুবকরা হচ্ছে বিপথগামী। কেউ কেউ কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন। জেলায় বাড়ছে নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। উচ্চ শব্দ ব্যবহার করে বেপরোয়া গতিতে ট্রাফিক আইন অমান্য করে পুরো জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে। এসকল তরুণের অধিকাংশই প্রবাসীর আলালের ঘরের দুলাল। আবার কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। আবার অধিকাংশ মোটর বাইকের নেই রেজিষ্ট্রেশন। আবার কারো কারো নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স । দলীয় বড় ভাইদের নাম বিক্রি করে তারা অনেকটা বেপরোয়া।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উঠতি বয়সী এসকল যুবকরা শহরের প্রেসক্লাব মোড়, পৌর সভার সামন, কুসুমবাগ পয়েন্ট, সদর উপজেলা পয়েন্ট, চাঁদনীঘাট ব্রীজ, মনুব্যারেজ, বেরিরপার পয়েন্ট, ওয়াপদা রোড ও পুরাতন হাসপাতাল রোডে বিকাল বেলায় জড়ও হয়ে প্রতিযোগীতা করে বাইক চালায়। এমন চিত্র জেলার বাকী ৬টি উপজেলায়।
জেলা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে জেলায় মোটর বাইকের রেজিষ্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেমলেট না থাকায় ২’শ ৮৪টি মামলা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারী মাসে ৬৪টি, ফেব্রুয়ারী মাসে ৭৯টি, মার্চ মাসে ৯৫টি ও এপ্রিল মাসে ৪৬টি মামলা দেয়া হয়। এদিকে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায় জেলায় ২০২০ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় ১১ জন এবং ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৭জন লোক মারা গেছেন। জেলা পুলিশ বলছে, নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে যানবাহন চালানো এবং অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে।
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় পিকআপ ভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটর সাইকেল আরোহী লন্ডন প্রবাসী আব্দুল আহাদ মারা যান। একই দিন জেলার কুলাউড়া উপজেলায় রবিরবাজার সড়কের বড়কাপন এলাকায় পানিবাহী ট্যাংকার ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাইফুদ্দিন (১৮) নামক এক তরুণ মারা যান।
মোটর বাইক চালক আলখাছ উর রহমান, হান্নান, দুরুদ সহ অনেকেই বলেন, বেপরোয়া গতিতে মোটর বাইক চালানো দেখলে রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পাই। যারা এমন বেপরোয়া ভাবে বাইক চালান দেখা গেছে তাদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কারো মাথায় নেই হেমলেট।
পথচারী আজাদ, মামুন ও নিতাই সহ অনেকেই বলেন, রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে মোটর বাইক চালানু দেখলে রাস্তায় বের হতে আতংকিত থাকি। বেপরোয়া গতিতে বাইক চালকদের অভিযানের মাধ্যমে আইনের আওয়াতায় আনা সময়ের দাবি। অন্যতায় বেপরোয়া চালকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলবে। তাদের দ্বারা অনেকেই পড়বে দূর্ঘটনার কবলে।
সচেতন মহল বলছেন, এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণরা এমন ভাবে গাড়ি চালায় তাদের গাড়ির শব্দ এবং দ্রুতগতির বেপরোয়া চালানো দেখে অনেকেই হতবাক না হয়ে পারছে না। শহরে বেরুলে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও যানজট লেগে থাকে। তারা সেই যানজটের ভেতর দিয়েও ট্রাফিক নিয়ম না মেনে বেপরোয়া ভাবে মটর সাইকেল চালিয়ে থাকেন। তাদের কারণে রাস্তায় আরো বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ উল্ল্যাহ অনেকটা স্বীকার করেই বলেন, নানাভাবে অভিযান চালিয়েও এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অভিযান পরিচালনা করে বাইক আটকালে কোনো না কোনো ভাবে দতবির আসে। তাই আমরাও অনেকটা বাধ্য হয়েই ছেড়ে দেই ।