South east bank ad

জাল দলিলে ভূমির নামজারি করেছে তারা

 প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন   |   প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ

জাল দলিলে ভূমির নামজারি করেছে তারা
* কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণে ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্সের সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ভূমির নামজারি করে বিক্রির পায়তারা

* ভূমি অফিস কেন্দ্রিক কিছু দালাল চক্রের যোগসাদৃশ্যে এই প্রতারণা

* আম-মোক্তার নিয়োগে অস্বীকার!

* যে দলিল দিয়ে নামজারি উল্লেখ করেছে এর সঙ্গে আমাদের রেজিস্ট্রিকৃত ও সংরক্ষিত একই নাম্বারের দলিলের কোন মিল নেই- সাব রেজিস্ট্রার

 

ঢাকা কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণে ‘ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের ৪৫ শতাংশ ভূমির জাল এওয়াজ বদল দলিল তৈরি করে নামজারি করার অভিযোগ উঠেছে এক সহোদরের নামে। এরা হলেন- কেরাণীগঞ্জের ইকুরিয়া পূর্ব মধ্যপাড়ার  মৃত নূরনবীর ছেলে আবু সাঈদ (৬২) ও আবু হোসেন (৫৯)।  তারা জাল দলিলে  কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণের ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্সের ইকুরিয়া মৌজার সি,এস ও এস,এ ১৩ দাগের ৪৫ শতাংশ ভূমি ‘ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে এওয়াজ বদল দেখিয়েছেন সি,এস ও এস,এ ৯২২ দাগে। অথচ কেরাণীগঞ্জের ইকুরিয়ার মৌজায় ৯২২ দাগে ৪৫ শতাংশ ভূমির বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। যে জাল দলিলে নামজারি করেছেন সেই দলিল (নং-৫৭৮৪) এদের নামে নেই বলে নিশ্চিত করেছেন কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সাব রেজিস্ট্রি অফিস। তারা ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলভমেন্ট প্রা. লি.-এর  কেরাণীগঞ্জের দক্ষিণের বেয়ারা মৌজার একটি দলিলকে (৫৭৮৪) কিছুটা অনুকরণ করে সেই জাল দলিল তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।

কেরাণীগঞ্জের (দক্ষিণ) শুভাঢ্যা ভূমি অফিস কেন্দ্রিক কিছু দালাল চক্রের  মাধ্যমে ভূমি অফিসের কিছু অসাধু লোকের যোগসাদৃশ্যে এই জাল দলিলে আবু হোসেন ও আবু সাঈদ নামজারি করেছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। ২০১৯ সালে জাল দলিল তৈরি করে ২০২০ সালে নামজারি করেছে তারা।

এর আগে আবু সাঈদ ও আবু হোসেন ২০০৬ সালে ২৫ জুন মো. হানিফ হাওলাদার নামে একজনকে আম-মোক্তার নিযুক্ত করেন। যার দলিল নং ৮৫৯৭। সেই আম-মোক্তার একই বছর ২৯ জুন তাদের পক্ষে ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্সের কাছে ৪৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। যার দলিল নং ৯১৩৯। নামজারি হয় ২০০৭ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি (জোত নং-৪৬)। ১৪ বছর পর প্রতারণা করে এই নামজারির বিপরীতে এওয়াজ বদল জাল দলিল তৈরি করে আবার নামজারি করেছে তারা। 

আবু সাঈদের কাছে জানতে চাইলে আম-মোক্তার নিয়োগের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে আম-মোক্তার নিয়োগ দেইনি। এটা আমার পৈত্তিক সূত্রে পাওয়া জমি।’ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার কোনাখোলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে আবু সাঈদদের ২০০৬ সালে আম-মোক্তার নিযুক্ত করা এবং সেই জমি বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে বিষয়টি আবু সাঈদের কাছে তুলে ধরলে তিনি আর কোন সৃদুত্তর দিতে পারেন নি।

এসব জাল দলিল তৈরি করে নামজারিতে  কেরাণীগঞ্জের (দক্ষিণ) শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ভূমি অফিসের তৎকালীন ভূমি সহাকারী কর্মকর্তা হাছান আহমেদসহ সে সময়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি)  সানজিদা পারভীন, ভূমি কার্যালয়ের নামজারি সহকারী  মোহাম্মদ মজিরুল হক ও কানুনগো নাজমুল হোসেনের  গাফিলতি রয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় দলিলটি যাচাই বাছাই করা  হয়নি। এমনকি আবু সাঈদ ও আবু হোসেন  যে দলিলে নামজারি করছেন তাদের সঙ্গে বিনিময়কারী জমির মালিক পক্ষ যাকে দেখানো হয়েছে তাদের আইনি নোটিশের মাধ্যমে অবগত করেননি সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্স লিমিটিডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানাজার এ টি এম জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আবু সাঈদদের আম-মোক্তার নিযুক্তকারী ১৩ দাগের ৪৫ শতাংশ জমি ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্সের  কাছে বিক্রি করেছে। যারা জমির মালিকানা  সেসব কাগজ সংশ্লিষ্ট সকল অফিসে আছে। কিন্তু আবার তারা ১৪ বছর পরে একই জমি ভুয়া দলিলে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজকে বিনিময় পক্ষ বানিয়ে এওয়াজ বদল দেখিয়েছে । যা আমরা কোন পক্ষই অবগত নই।

ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম নাজমুল হক বলেন, প্রথমত, আবু সাঈদরা বড় ধরণের প্রতারণা করেছে ঢাকা মাল্টি কমপ্লেক্স লি.-এর ভূমি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লি.-এর সঙ্গে ভুয়া দলিলে বিনিময় দেখিয়ে। দ্বিতীয়ত, ভূমি অফিসের দালাল চক্র ও কতিপয় দূনীর্তিবাজ ভূমি অফিসের কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভুয়া দলিলে ঢাকা মাল্টি কমপ্লেক্সের জমির নামজারি কেটে তাদের নামে নামজারি করে। তাই এসব জালিয়াতিতে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।’

কেরাণীগঞ্জ (দক্ষিণ) শুভাঢ্যা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রনজিৎ চন্দ্র নাথ বলেন, আবু সাঈদরা ঢাকা মাল্টি এগ্রিকালচারাল কমপ্লেক্সের ভূমি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজের সঙ্গে এওয়াজ বদল দেখিয়েছে। এখানে কাগজ পত্র দেখে  শতভাগ ভুল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ অফিস থেকে যারা নামজারির প্রস্তাবনা দিয়েছে মনে হয় অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুলটি করেছে। এখন মিস কেইস করলেই সমাধান হয়ে যাবে। তবে যারা ভুয়া দলিল করেছে তারা বড় ধরণের জালিয়াতি করেছে। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এসব বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার মো. শাহাজাহান আলী বলেন, যে দলিল (নং-৫৭৮৪) দিয়ে তারা নামজারি উল্লেখ করেছে। এটি দেখা যাচ্ছে এওয়াজ বদল দলিল ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই রেজিস্ট্রিকৃত।  সে দলিলের সঙ্গে আমাদের রেজিস্ট্রিকৃত ও সংরক্ষিত একই নাম্বারের দলিলের কোন মিল নেই। এ দলিলটি ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজের ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই রেজিস্ট্রিকৃত এবং অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অন্য মৌজার একটি দলিল।

জাল দলিল দিয়ে নামজারির বিষয়ে জানতে চাইলে কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণের ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
BBS cable ad

প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ এর আরও খবর: