South east bank ad

বন্যায় বিপন্ন মানুষের পাশে অনন্য ভূমিকায় সশস্ত্র বাহিনী

 প্রকাশ: ২৪ অগাস্ট ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন   |   সেনা প্রধান

বন্যায় বিপন্ন মানুষের পাশে অনন্য ভূমিকায় সশস্ত্র বাহিনী

ফেনী-কুমিল্লাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত বানভাসি মানুষদের সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী তথা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। চরম বিপর্যয়ের মাঝেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবারও ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোসহ নানা মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্যে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর ও নৌবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের এক দিনের বেতনের টাকা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনী বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোতে নৌকা, স্পিডবোট ও হেলিকপ্টারসহ নানা মাধ্যমে উদ্ধার তৎপরতা ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন। এলাকাভিত্তিক সহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর গণমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। একইভাবে নৌবাহিনীও বেশকিছু এলাকায় তাদের সরঞ্জাম ব্যবহার করে বন্যার্ত অসহায়দের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আকাশপথে প্রতিনিয়তই বন্যাদুর্গত এলাকা পর্যবেক্ষণসহ ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছে বিমানবাহিনী।

খাগড়াছড়িতে বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে সেনাবাহিনী : আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। এরই মধ্যে চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপদসীমার দুই থেকে ছয় ফিট অতিক্রম করায় আশপাশের এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দিনভর উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার খাগড়াছড়িবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। আশ্রয়কেন্দ্রসমূহে অবস্থানরত অসহায় মানুষদের রান্না করা খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুকনা খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাই, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

ফেনীর পরশুরাম এলাকা পরিদর্শনে সেনাপ্রধান : ফেনী জেলার পরশুরামে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। পরিদর্শনকালে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর বিবিধ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন। সেনাপ্রধান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই মানবিক কার্যক্রম সেনাবাহিনীকে অব্যাহত রাখতে হবে। শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেলিকপ্টারযোগে ফেনী জেলার পরশুরাম এবং সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন সেনাপ্রধান। এসময় তিনি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। পরিদর্শনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার কুমিল্লা এরিয়াসহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন বিমানবাহিনী প্রধানের : বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গতদের মধ্যে অব্যাহতভাবে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বন্যাকবলিত এলাকায় গমন করেন। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, এশিয়ান পেইন্টস, ইমপ্রেস টেলিফিল্মমসহ সামরিক ও বেসামরিক সংস্থা বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে। যেকোনো সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবাহিনীর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেল চালু করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।

বাফওয়া কর্তৃক বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ : দেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের কল্যাণে সেবার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী মহিলা কল্যাণ সমিতি (বাফওয়া)। বন্যাদুর্গত মানুুষের দুর্দশা লাঘবে বাফওয়ার সভানেত্রী সালেহা খান শুক্রবার তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এসময় বাফওয়ার সভানেত্রী বিভিন্ন প্রকার শুকনা খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বন্যাদুর্গতদের সহায়তার জন্য বিমানবাহিনীর নির্ধারিত টিমের কাছে হস্তান্তর করেন।

BBS cable ad