২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে; যেসব পণ্যের দাম কমছে
২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার আগের সকল বাজেটের চাইতে বড়। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০তম বাজেটের অঙ্কটা ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট অথবা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। বাজেট পেশের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেটের অনুমোদন দেয়া হয়।
আমদানি করা স্মার্টফোনের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে। সঙ্গে মোবাইল সিম ব্যবহারের করে সেবা গ্রহণের বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, বার্তা পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়ে যাবে। আমদানি করা বিলাসী পণ্য যেমন, বডি স্প্রে, প্রসাধনী পণ্য, জুস, প্যাকেটজাত খাদ্য প্রভৃতি আমদানিতেও নতুন করে শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া মদ-বিয়ার, সিগারেট, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার, শিশুদের থিম পার্কের রাইডের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে মদ-বিয়ার আমদানিতে ২০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবার সম্পূরক শুল্ক না বাড়ালেও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সিগারেটের মূল্যস্তর বাড়ানো হয়েছে। তাই এ ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার পণ্যের পরিবেশক ও ডিলারদের নিট কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। থিম পার্কের রাইড এমিউজমেন্ট পার্ক স্থাপনের রাইডসামগ্রীর ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কয়েকটি পণ্যের ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, আগাম কর অথবা সম্পূরক শুল্কে ছাড় দেয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। এর মধ্যে করোনা পরীক্ষা খাতে ব্যবহৃত পণ্যের পাশাপাশি বেশ কিছু ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দাম কমতে পারে।
১২ অধ্যায়ের বাজেটে দাম কমবে- কোভিড-১৯ টেস্ট কিট, পিপিই এবং ভ্যাকসিন আমদানি উৎপাদন, দেশীয় ফ্রিজ, এসি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন এবং ল্যাপটপের। এদিকে উৎপাদন পর্যায়ে মুড়ির ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে প্যাকেটজাত মুড়ির দাম কমতে পারে। ব্যবসায়ী পর্যায়ে ফলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে কমতে পারে ফলের দাম। ইউডার (নিড়ানি) ও উইনোয়ারের (ঝাড়াইকল) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে থ্রেসার মেশিন, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন হারভেস্টর, রোটারি টিলার, নিড়ানি ও ঝাড়াইকলের আমদানি পর্যায়ের আগাম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
সিসিভেদে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই মাইক্রোবাসের দাম কমতে পারে। হাইব্রিড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। তাই জ্বালানিবান্ধব গাড়ির দাম কমতে পারে। এছাড়া ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেক্ট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার, প্রেসার কুকারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেক্ট্রিক ওভেনের উৎপাদন পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দামও কমতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্পিনিং মিলে ব্যবহৃত পেপার কোনের ওপর বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। পাশাপাশি স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার উৎপাদনের লক্ষ্যে কতিপয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যামান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯ টেস্ট কিট, পিপিই এবং ভ্যাকসিন আমদানি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। গ্রামাঞ্চলে মানুষের স্যানিটেশন সুবিধা আরও সুলভ করার লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ‘লং প্যান’-এর ওপর থেকে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অটিজম সেবার কার্যক্রমের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।