South east bank ad

‘স্কুল মিল’ প্রকল্প : একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে মঙ্গলবার

 প্রকাশ: ৩০ মে ২০২১, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন   |   দেশ

‘স্কুল মিল’ প্রকল্প :  একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে  মঙ্গলবার


২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় স্কুল মিল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন; শিশুদের টিফিনে দেওয়া হয় খিচুড়ি।২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় স্কুল মিল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন; শিশুদের টিফিনে দেওয়া হয় খিচুড়ি।পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০ থেকে ২০১৪ মেয়াদে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় ‘স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেয়, যার আওতায় দেশের ২৩ জেলার নির্বাচিত ৮৬টি উপজেলায় নির্দিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুষ্টিকর বিস্কুট বিরতণ করা হত।

এরপর দেশের আট বিভাগের ৩৯ জেলার নির্বাচিত ১০৪ উপজেলার ৩১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থীকে স্কুলে পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহ করতে প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০১৭ সালে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির ওই সংশোধনীতে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সাল পর্যন্ত। পরে ব্যয় বৃদ্ধি না করে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার সেই প্রকল্পটি ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ নামে সম্পূর্ণ প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।


‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ নামের এ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিস্তর সমালোচনার পর কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পরিকল্পনা বাদ রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির যোগান বাড়ানোর প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের পুরো অর্থ যোগানো হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে প্রস্তাব থেকে ব্যয়ের পরিমাণ এক হাজার ৬৭১ কোটি টাকা কমিয়ে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা করা হয়েছে। 
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির যোগান বাড়াতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৯২টি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ২১টি শিক্ষা থানার শিক্ষার্থীদের দুপুরে স্কুলে গরম খাবার দেওয়া হবে।  

গরম খাবার বলতে মূলত ডাল আর স্থানীয় সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে এখানে। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের জন্য শুরুতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল একহাজার ৯৬১ কোটি টাকা।

এর মধ্যে খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশনের প্রশিক্ষণ নিতে ১ হাজার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বিদেশ সফরের একটি প্রস্তাব ছিল, যা নিয়ে গতবছর ব্যাপক সমালোচনা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম  বলেন, “গত সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কশিনের পিইসি (প্রাক মূল্যায়ন কমিটির) সভায় প্রকল্পটির কিছু ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলে যথোপযুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিলাম । সম্প্রতি প্রকল্পটি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে ডিপিপি পুনর্গঠন করে আবার পাঠিয়েছে। আগামী একনেক বৈঠকে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। 



বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) েএখন প্রয়োজনভিত্তিক দেশে বা বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। শেষ পর্যন্ত ১ হাজার লোকের বিদেশ সফরের ওই অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব (পরিকল্পনা) মো. আশরাফুজ্জামান।  “ডব্লিউএফপির সাথে সমঝোতার স্মারকের আওতায় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হওয়ায় আমরা মূল প্রকল্প থেকে বিদেশে প্রশিক্ষণের অংশ বাদ দিয়েছি।”

ডব্লিউএফপির এক চিঠিতে বলা হয়, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত ৫ বছরে এই প্রকল্পে সংস্থাটি ৭০ লাখ ডলারের কারিগরি সহায়তা দেবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০১৩ সালে সরকারের অনুমোদন নিয়ে বরগুনা জেলার বামনা ও জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মৌসুমি সবজি ও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তৈরি ‘স্কুল মিল’ মডেল চালু করে। এরপর ২০১৮ সালে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ৫ দিন খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো এবং একদিন পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহ করা শুরু হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই খাবার শিক্ষার্থীদের দৈনিক সর্বোচ্চ ৬২৮ কিলো ক্যালোরি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেছে। আবার যেসব স্কুলে বিস্কুট খাওয়ানো হয়েছিল, সেসব শিক্ষার্থী ৩৩৬ কিলো ক্যালরির যোগান পেয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৯ সালে ডব্লিউএফপির কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে চলমান স্কুল ফিডিং কর্মসূচির (তৃতীয় সংশোধনী) আওতায় বামনা ও ইসলামপুরসহ মোট ১০৪টি উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে বিস্কুট ও রান্না করা খিচুড়ি পরিবেশন শুরু করে।

এর আওতায় ৮৭টি উপেজেলায় শুধু বিস্কুট বিতরণ এবং ১৭টি উপজেলায় বিস্কুটের পাশাপাশি খিচুড়ি পরিবেশন করা হচ্ছিল মহামারী শুরুর আগ পর্যন্ত। চলমান প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে দেশের সকল প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রতিদিনের ন্যূনতম ক্যালোরির চাহিদা পূরণে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।


জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন সমীক্ষা ২০২১ অনুযায়ী, দেশে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে এক চতুর্থাংশের কম। আর বেনবেইস ২০১৯ সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির আগেই দেশের অর্ধেকের বেশি ছাত্রী ঝরে পড়ছে। এ অবস্থায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ অর্জনের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নে, বিশেষ করে মানব সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। বিশেষ করে শিশুদের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং তাদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ এ প্রকল্পের লক্ষ্য। ২০০০ সালের বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোতে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে পাইলট আকারে এই প্রকল্পটি শুরু হয়।





BBS cable ad