উত্তরণ ফাউন্ডেশন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প: মুন্সীগঞ্জের পাঁচ শতাধিক বেদে সদস্যরা পেলেন বীনামুল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে উত্তরণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি ‘ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অদ্য ১৫ আগস্ট  (রবিবার) মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার ৪নং উত্তর খড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০ টায় আয়োজিত এই মেডিকেল ক্যাম্পে কুমারভোগ, কনকসার ও গোয়ালিমান্দ্রা ইউনিয়ন থেকে আগত প্রায় পাঁচ শতাধিক বেদে সদস্যরা ঢাকার অভিজ্ঞ ডাক্তারদের নিকট থেকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বীনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী গ্রহণ করেছেন, পাশাপাশি উপস্থিত সকলের মাঝে একটি করে গামছা, মাস্ক ও সাবান বিতরণ করা হয়েছে। 

উপস্থিত রোগীদের সুবিধার্থে মেডিকেল ক্যামপ্টিতে যথাক্রমে মেডিসিন, গাইনী, অর্থোপেডিকস ও সার্জারী এই ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি বুথে দুইজন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আগত রোগীদের সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান করেন। বুথগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সেবা প্রদান করেন ডা: মো: আনহারুর রহমান, ডা: এটিএম বাহার উদ্দীন, ডা: সুরাইয়া খানম, ডা: রোহান আহমেদ, ডা: শারমিন আহমেদ, ডা: সিহান মাহমুদ রেদোয়ানুল হক, ডা: নাজিয়া সুলতানা, ডা: ওয়াসিফুল শিমুল ও ডা: রুমি মুবিন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন উত্তরণ ফাউন্ডেশন এর পরিচালক এম এম মাহবুব হাসান। তিনি উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যগণ, যার দায় এই জাতিকে আজন্মকাল বয়ে বেড়াতে হবে। জাতীয় শোক দিবস ও বেদনার্ত একটি দিনে এমন মহতি কাজের অংশীদার হতে পেরে তিনি গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হতো না, তাই আসুন সকলে মিলে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে নিজেদের কলঙ্ক মোচনের লড়াইয়ে শামিল রাখি। 

পিছিয়ে পড়া বেদে জনগোষ্ঠীর সদস্যদেরকে ২০০৯ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ তাদের কল্যাণে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এম এম মাহবুব হাসান। তিনি আরো বলেন, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তথা ডিআইজি হাবিবুর রহমান একজন নক্ষত্র পুলিশ কর্মকর্তা যিনি তাঁর নিজের মৌলিক পুলিশিং পেশার পাশাপাশি সমাজের পিছিয়েপড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসা থাকলে ডিআইজি হাবিবুর রহমান দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবেন। তিনি বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে উপস্থিত সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। পরিশেষে, উত্তরণ ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

গোপালগন্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সদস্য নারীনেত্রী তানিয়া হক শোভা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে উত্তরণ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি গর্বিত ও আপ্লুত। গোপালগঞ্জের কৃতিসন্তান ডিআইজি হাবিবুর রহমান এর সকল মানবিক কার্যক্রমে আমি আপনাদের পাশে থাকবো। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যগণের রূহের মাগফেরাত কামনাসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডিআইজি হাবিবুর রহমানের দির্ঘায়ূ কামনা করে সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। 

উত্তরণ ফাউন্ডেশন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের সমন্বয়কারী ও অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর (সার্জারী) ডা: মো: আনহারুর রহমান বলেন, আমি এর আগেও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের দুইটি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজনে সহযোগিতা করেছি। মূলত: মানবতার ফেরিওয়ালা ডিআইজি হাবিব স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হয়েছি। আপনাদের সকলের দোয়া ও সহযোগিতায় আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। 

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন বলেন, ডিআইজি হাবিব স্যার আমাদের পুলিশ বিভাগের গর্ব। তিনি নিজের এতো বড় দায়িত্বের বাইরেও এই সকল পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। আপনাদের সকলের দোয়া ও সমর্থন থাকলে স্যার আরো এগিয়ে যাবেন। 

উল্লখ্য, ঢাকা রেন্জের বর্তমান উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) মেডিকেল ক্যাম্পটির আয়োজক সংস্থা ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৪ সাল থেকে সংস্থাটির ব্যানারে পিছিয়েপড়া বেদে ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতক জীবনমান উন্নয়নেক লক্ষে কাজ করে আসছেন। এছাড়া গত কয়েক বছর যাবত তিনি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর বাসিন্দাদের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। সমাজের অস্পৃশ্য ও পিছিয়েপড়া এ সকল মানুষের দিন বদলের কারিগর ও নিবেদিত প্রাণ হিসেবে ডিআইজি হাবিবুর রহমান এর বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপসমূহ ইতিমধ্যে সর্বমহলে ব্যাপক প্রচারিত ও প্রশংসিত হয়েছে যা তাকে পৌছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। 

উত্তরণ ফাউন্ডেশন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে স্থানীয় বেদে জনগোষ্ঠীদের মধ্যে অন্যান্যদের সাথে উপস্থিত ছিলেন সুইটি মেম্বর, রুবেল মেম্বর, সাহেব আলী মেম্বর, এবাদুল মেম্বর ও উত্তরণ শিক্ষালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণসহ প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।