South east bank ad

যে কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন প্রযোজ্য নয় মুনিয়ার মামলায়

 প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন   |   প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ

যে কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন প্রযোজ্য নয় মুনিয়ার মামলায়
মুনিয়ার মৃত্যুকে নিয়ে দ্বিতীয় মামলার তদন্ত এখন চলমান রয়েছে। প্রথম মামলায় কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার পর মুনিয়ার বড়বোন নুসরাত তানিয়া দ্বিতীয় মামলা করেছেন। ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করা হয়েছে হত্যা এবং ধর্ষণের অভিযোগে। হত্যা এবং ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ -এর ৯ -এর ধারা অনুযায়ী এই মামলাটি করা হয়েছে। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে নিরপেক্ষ আইন বিশ্লেষকদের যে মতামত নেয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ -এর ৯ -এর ১, ২, ৩, ৪ কোনো ধারা, উপ-ধারায় এই মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই আইনের ৯ -এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য করা হবে। 

ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের সুপ্রিমকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, সম্মতি ব্যতীত জোর করে যদি কোনো নারীর সাথে যৌন সঙ্গম হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সে সম্পর্কে অভিযোগ করতে হবে এবং যিনি প্রতারিত হয়েছেন বা যাকে জোর করে ধর্ষণ করা হয়েছে বলা হচ্ছে, তার দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু নুসরাত যে সময় তার বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন, তার পর পর তিনি ধর্ষণের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি এবং তার মেডিকেল পরীক্ষারও উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এই আইনে ২ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনন্য এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধারায় ধর্ষণ পরবর্তী মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। 

ধর্ষণ পরবর্তী মৃত্যু হতে পারে আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী তিনভাবে।  প্রথমত, ধর্ষণের পরে যিনি ধর্ষক তিনি সরাসরিভাবে হত্যা করলেন। দ্বিতীয়ত, এই ধর্ষণের ঘটনার পর সকলে সম্মিলিতভাবে তার উপর জোর জবরদস্তি প্রয়োগ করলো, অথবা ধর্ষণের ফলে স্বাস্থ্যগত কারণে তার মৃত্যু ঘটলো। কিন্তু আলোচ্য মুনিয়া মৃত্যুতে দেখা যাচ্ছে যে, ধর্ষণ পরবর্তী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, সেখানে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। কাজেই ধর্ষণ এবং মৃত্যু একসাথে সংঘটিত হওয়ার যে ৯ এর ২ ধারা, সেই ২ ধারা এই ঘটনার জন্য প্রযোজ্য হবে না বলেই আইনজীবীরা মনে করছেন। ৯ এর ৩ ধারায় বলা আছে যে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলগতভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড, সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অনন্য এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এখানে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ থাকতে হবে এবং ধর্ষণের পর সংঘবদ্ধভাবে তাকে হত্যা করার ঘটনা ঘটতে হবে। যেটি মুনিয়ার মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঘটেনি। কারণ ঘটনাস্থলে কোন হত্যাকারীকে পাওয়া যায়নি। আর এ সমস্ত কারণেই ৯ এর ১, ২ এবং ৩ উপ-ধারা এ মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে দেখবেন যে, যে ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেই ধারা আদৌ প্রযোজ্য কিনা, কতটুকু প্রযোজ্য এবং সেই ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে মুনিয়ার মৃত্যুতে যে অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে সেই অপরাধে ৯ এর ১, ২, ৩ ধারা সংঘটিত হয়নি।
BBS cable ad

প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ এর আরও খবর: