নির্মাণের ১৫ দিনেই ভেঙে গেছে কোটি টাকার কালভার্ট
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাঁশতৈল ইউনিয়নে একটি রাস্তায় কালভার্ট নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় তা ভেঙে পড়েছে। নির্মাণ কাজে পরিমাণমতো রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার না করে নিম্নমানের কাজ করায় কালভার্টটি ভেঙে পড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাঁশতৈল মুনসুর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গাইরাবেতিল পর্যন্ত দুইশ কিলোমিটার রাস্তার পাঁচটি কালভার্টসহ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এক কোটি ১২ লাখ টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত হয় টাঙ্গাইলের সুহান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, সুহান এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল গফুর কাজটি নিজে বাস্তবায়ন না করে টাঙ্গাইলের সোহেল রানা নামে এক ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেন। সোহেল রানাও কাজটি টুটুল নামে অপর একজনকে দিয়ে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টুটুলও কাজটি না করে আজাদ নামে টাঙ্গাইলের আরেকজনের উপর দায়িত্ব দেন। পরে আজাদ বাঁশতৈল নয়াপড়া গ্রামের রনিকে সঙ্গে নিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেন। গত এপ্রিলে শেষ দিকে তারা প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, কালভার্ট নির্মাণের সময় তারা পরিমাণ মতো রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার না করে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেন। কাজটি দেখার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী শামসুদ্দিনের অবহেলার কারণে ঠিকাদার কাজে অনিয়মের সুযোগ নেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গায়রাবেতিল গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, বাঁশতৈল গ্রামের আলমগীর হোসেন, বাঁশতৈল নয়াপাড়ার মুসা মিয়া বলেন, ঠিকাদার পাথরের পরিবর্তে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করেছেন। রড ও সিমেন্টও পরিমাণের তুলনায় অর্ধেকেরও কম ব্যবহার করেছেন। এভাবে কাজ করলেও স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের কাউকে তদারকি করতে দেখা যায়নি বলে তারা অভিযোগ করেন।
ওই কালভার্ট নির্মাণ কাজের শ্রমিক সর্দার হাবিবুর রহমান বলেন, কালভার্ট নির্মাণে যে পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করার কথা তারা অর্ধেকও দেয়নি। যা দিয়েছে তা খুবই নিম্নমানের ছিল বলে তিনি জানান।
বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মিল্টন বলেন, অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কালভার্ট নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় ভেঙে পড়ছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল গফুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ঠিকাদার সোহেল রানা ও টুটুলের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, তারা টাকা ঠিকমতো দিলেও তদারকির অভাবে কাজ নিম্নমানের হয়েছে। তবে কালভার্টটি পুনরায় করা হচ্ছে বলে তারা জানান।
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামসুদ্দিন বলেন, ঠিকাদারের লোকজনকে বারবার বলার পরও তার কথার গুরুত্ব দেয়নি তারা।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ভেঙে পড়া কালভার্টটি ঠিকাদারকে পুনরায় নির্মাণ করে দিতে হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার কালভার্ট ভাঙার কাজও শুরু করেছেন।