আজিজ-জিয়াউল-সোহায়েলের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের জালে ধরা পড়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান ও নৌবাহিনীর অব্যাহতিপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঐ কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে অনেক আগে থেকেই চাপে ছিল কমিশন। বিভিন্ন স্তরের চাপের কারণে কমিশন এই ধরনের ক্ষমতাধর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কমিশন এখন চাপমুক্ত হওয়ায় তাদের দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাজাপ্রাপ্ত ভাইদের সাজা মওকুফ ও দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। সাভারের আমিনবাজারে সিলিকন সিটি হাউজিংয়ে ১৮৬ কাঠা জমির ওপর একটি বাংলো, আশুলিয়ার ইয়ারপুরে ২১ বিঘা জমি, মোহাম্মদপুরে ৪ কাঠার দুটি প্লট, মিরপুর ১২ নম্বরে ৫ কাঠার প্লটে আজিজ আহমেদের একটি ১০ তলা বাড়িসহ আরো অঢেল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক।
এনটিএমসির সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসানের বিষয়ে দুদকের একটি সূত্র জানায়, তার নামে অঢেল সম্পদের তথ্য রয়েছে সংস্থাটির কাছে। চাকরিচ্যুত এই সেনা কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে ১৯ আগস্ট দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও র্যাবের সাবেক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েলের দুর্নীতির প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছে দুদক। সূত্র জানায়, সাবমেরিন প্রকল্প, পায়রা বন্দরে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। সাবেক এই বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা ও ময়মনসিংহে তার একাধিক বাড়ি ও মায়ের নামে হাসপাতালসহ বিপুল সম্পদের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে দুদকের কাছে।
সরকার পতনের পরই জিয়াউল আহসান ও মোহাম্মদ সোহায়েলকে আটক করা হয়। সেই সঙ্গে হত্যা মামলায় তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। আর সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এখন দেশের বাইরে আছেন।
আওয়ামী লীগের আমলে খুবই ক্ষমতাধর এই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের যে এখতিয়ার আছে সেটা সে এখনো আত্মস্থ করতে পারেনি। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি সব সময় কর্তৃত্ববাদী সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান বা মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির অনুসন্ধানের যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটা আশাব্যঞ্জক। এর মানে দুদক চাইলেই পারে।