দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব
বিজিবিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম সেরা নারী সৈনিক নুখিংসাই মারমা। ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতের বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে মোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
এর মধ্যে নুখিংসাই মারমা শ্রেষ্ঠ নারী সৈনিক নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব।’
নুখিংসাইর শৈশবে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে দেশ রক্ষায় আত্মনিয়োগ করবেন। সেই ইচ্ছা থেকে সেনাবাহিনীতে চাকরির আবেদন করেছিলেন। চাকরিটি হয়নি তার। তবে বিজ্ঞপ্তি দেখেই আবেদন করে ফেললেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে (বিজিবি)। এবার ধরা দিল স্বপ্ন। নির্বাচিত হলেন প্রশিক্ষণের জন্য। আর এ প্রশিক্ষণেও এল তাক লাগানো সাফল্য। পাহাড়ি মেয়ের পাহাড়ের মতো উঁচু মনোবল আর সাহস কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিজিবির শ্রেষ্ঠ নারী সৈনিক হিসেবে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার পাড়ায় নুখিংসাই মারমাদের বাড়ি। দুর্গম পথ পেরিয়ে এ বাড়িতে গিয়ে কথা হয় নুখিংসাইয়ের গর্বিত বাবা উচিংমং মারমার সঙ্গে। তিনি তারাছা ইউনিয়নটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য। তিনি জানান, জেলা সদরের ডনবস্কো উচ্চ
বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে তার মেয়ে। আর বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি। এরপর ঢাকার মিরপুরে নার্সিং কলেজে এক বছর পড়ে। এরই মধ্যে বিজিবির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে সে আবেদন করে। মেয়েকে নিয়ে বাবা উচিংমং মারমার আনন্দের শেষ নেই। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমার মেয়ে বিজিবির একজন গর্বিত নারী সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে দেয়া ছুটিতে সে বাড়িতে এসেছে।’
নুখিংসাইয়ের মা উম্যাচিং মারমা নিজ ভাষায় বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নুখিংসাই ছোটবেলা থেকেই বলে এসেছে যে সে বড় হলে আর্মি, বিজিবি বা পুলিশে চাকরি করবে। অন্য চাকরি তার ভালো লাগে না। বিজিবির একজন গর্বিত নারী সদস্য হওয়ায় আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এজন্য আমি, আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াবাসী সবাই আনন্দিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার মেয়েসহ আমার মতো মায়েদের মেয়েরা দেশের সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করবে ভেবেই খুব ভালো লাগছে।’
মোবাইল ফোনে নুখিংসাই মারমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার খুব ইচ্ছা ছিল ডিফেন্সে জব করব। ২০২৩ সালে সেনাবাহিনীতে আবেদন করেছিলাম। সেখানে আমার হয়নি। তার পরও আমি চেষ্টা করতে থাকি, যেভাবেই হোক আমার চাকরি করতে হবে ডিফেন্সে। পরে বিজিবিতে আবেদন করলাম। এবার হয়ে গেল। বিজিবির একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। দেশের ভূখণ্ড রক্ষা করতে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশের সীমান্তে কোনো শত্রুকে স্থান দেব না।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে তার হাতে তুলে দেন পুরস্কার। ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতের বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে মোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, ৬৪৯ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। এর মধ্যে নুখিংসাই মারমা শ্রেষ্ঠ নারী সৈনিক নির্বাচিত হয়েছেন। প্রশিক্ষণ শেষ করা সৈনিকদের সীমান্তে দায়িত্ব বণ্টন করা হবে।
বিজিবিতে নারী সদস্যদের কাজের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বাহিনীর উপমহাপরিচালক (মিডিয়া) কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, বিজিবিতে সব সদস্যের জন্যই নিরাপদ কর্মপরিবেশ রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারী সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত তল্লাশি থেকে শুরু করে চোরাচালান রোধেও নারী সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। নুখিংসাই মারমার মতো সাহসী এবং বিচক্ষণ নারীদের জন্য বিজিবিতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তাদের সাহসী অবস্থান দেশের সীমান্তকে শত্রুমুক্ত রাখতে ভূমিকা পালন করবে।